যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাজেদা ফাউন্ডেশন। আগামী দুই মাসের জন্যে এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার (১৬ জুন) থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হাসপাতালে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে পাঁচ জন মারা গেছেন। করোনা ইউনিট ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১১৮ জন ভর্তি আছেন। গুরুতর অবস্থায় আইসিইউ ইউনিটে একজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোরে ৪০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টার ল্যাবে ৩৬২ জনের নমুনা পরিক্ষা করে ১৫৪ ও জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১০২টি অ্যান্টিজেন পরিক্ষা করে ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বুধবার নমুনা পরীক্ষা করে বৃহস্পতিবার এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী যশোরে সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিনই করোনায় দুই-চার জনের মৃত্যু হচ্ছে। হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে। রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে মাস দুয়েক আগে কোনো ধরণের জনবল কাঠামো ছাড়াই তিন শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ ইউনিট চালু করা হয়েছে। ফলে করোনা সামাল দিতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এই অবস্থায় কোভিড ব্যবস্থাপনার চিকিৎসা সেবার হাত বাড়িয়ে দেওয়া ঢাকার কেরানীগঞ্জের সাজেদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠান। পরে মহাপরিচালক ও পরিচালকের চিঠির ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার সাজেদা ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চুক্তি সই হয়।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক আখতারুজ্জামান বলেন, আগামী দুই মাসের জন্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাজেদা ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকের লিখিত আদেশের ভিত্তিতে এই চুক্তি হয়েছে। কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা না নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি এই হাসপাতালের করোনা চিকিৎসা সেবা পরিচালনা করবে।
তিনি জানান, করোনা চিকিৎসা সেবা পরিচালনার জন্যে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স, প্যারামেডিক্যাল ডিপ্লোমাধারী ১২ জন সেবক ও ১০ জন ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী এই হাসপাতালে কাজ করবেন। এছাড়া ৫টি হাইফো ন্যাজাল যন্ত্রসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, অক্সিজেন, ওষুধসহ বিভিন্ন ধরণের সরঞ্জামও সরবরাহ করা হবে বলে চুক্তিতে রয়েছে। বুধবার থেকেই তাদের সরঞ্জাম হাসপাতালে আসা শুরু করেছে।
এদিকে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের আবাসনের জন্যে যশোরের রামনগর এলাকার আরআরএফ রিসোর্ট দুই মাসের জন্যে ভাড়া করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাজেদা ফাউন্ডেশন পরিচালিত সাজেদা হাসপাতালের কোভিড ইউনিট প্রধান (ইনচার্জ) ইবনে নাকিব বাংলানিউজকে বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিট পরিচালনার জন্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবল এবং চিকিৎসার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা নারায়ণগঞ্জে এক হাজার ২২ ও ঢাকার কেরানীগঞ্জে সাজেদা হাসপাতালের মাধ্যমে ১৩০ জন করোনা রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা করেছি। ঢাকাতে এখন করোনা রোগী কম এজন্য আমরা সীমান্তবর্তী জেলা হিসাবে যশোরকে বেছে নিয়েছি। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দুই মাস যশোরে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।