খুলনা-যশোর মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার কাজ চলমান থাকা অবস্থাতেই প্রায় সাত কিলোমিটারের সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাহসড়রেক ওই অংশে পিচ কার্পেটিং সরে গিয়ে ঢিপির মতো তৈরি হয়েছে। অনেকস্থানে দেখা দিয়েছে গর্ত। সংশ্লিষ্টরা এর জন্য ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবেহনের ওভারলোডের কথা বলছে। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা এর জন্য কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জানা যায়, খুলনা-যশোর মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে ৩২১ কোটি টাকার কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের জুন মাসে। এ প্রকল্পের এক বছরের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ সম্পন্ন হয়নি। এর ফলে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে খুলনা-যশোর মহাসড়কের চেঙ্গুটিয়া এলাকার কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু এরপর ভারী যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, ওভারলোড থাকা ও মহাসড়কের যত্রতত্র ব্রেক করার কারণে চেঙ্গুটিয়ার সাত কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে সড়কে দেওয়া পিচ কার্পেটিং দু’পাশে সরে গিয়ে ঢিপির সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কার্পেটিং উঠে গর্ত হয়ে গেছে।
সওজ যশোর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের চাপাবাড়ি থেকে রাজঘাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক সংস্কারে দুটি প্যাকেজে ৩২১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে পদ্মবিলা রাজঘাট হয়ে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটারের ১৪৭ কোটি টাকার কাজ করে তমা কনস্ট্রাকশন। এ কাজ এখনও চলমান। অবশিষ্ট ১৯ কিলোমিটার কাজ পায় মাহবুব ব্রাদার্স। যানবাহনের চাপ থাকার কারণে চেঙ্গুটিয়া এলাকায় মহাসড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চেঙ্গুটিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা আসাদ শেখ বলেন, এখানে যানবাহন এত বেশি থাকে যে সড়ক পাড় হতে গেলে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর যানজটে গাড়ি থেমে গেলে সড়ক পারাপার হতে হয়। গাড়িগুলো গতিতে এসে এ মহাসড়কে হঠাৎ ব্রেক করলেই পিচ কার্পেটিং এক পাশে চলে যায়। এর ফলে এখানে বর্তমানে যানবাহন চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
তবে ওভারলোডের কারণেই সড়কের ক্ষতি হচ্ছে এমনটা মানতে নারাজ ট্রাকচালক ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, এ জায়গাটিতে কাজের মান নিয়ে সংশয় রয়েছে। মহাসড়কের অন্যান্য জায়গাতেও চালকরা ব্রেক করি। সেখানেতো এমন সমস্যা হয়নি। এখানেই কেন হলো? গাড়ি কখন-কোখায় ব্রেক করা হবে তাতো আগেই ঠিক করা মুশকিল। চেঙ্গুটিয়া এলাকায় ব্রেক করলেই সড়কের পিচ সরে গিয়ে ঢিপি হচ্ছে। তিনি বলেন, ওভারলোডের কারণে এমনটি হলে শুধু এ মহাসড়কেই হবে কেন? অন্যান্য মহাসড়কেওতো আমরা ট্রাক চালাই। সেখানেতো এমন হয় না। ভ্যানচালক সামাদ শেখ বলেন, মহাসড়কে এভাবে পিচ কার্পেটিং সরে লাইন দিয়ে ঢিপি হওয়ার কারণে চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে ভ্যান চালানো কঠিন হচ্ছে।
যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মহাসড়ক সংস্কার কাজ প্রকল্প এখনও চলমান। কিন্তু চেঙ্গুটিয়া এলাকায় থেমে থেমে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ৬-৭ কিলোমিটার। যা গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে সম্পন্ন হয়েছিল। ওই এলাকার কাজের ঠিকাদার রয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন। কাজের দিকে ঠিকাদারের কোনও ত্রুটি পাওয়া যায়নি। যানবাহনের দ্বিগুন বা তার চেয়েও বেশি লোড থাকার কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে মহাসড়কে যানবাহনের লোড মনিটরিংয়ের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মহাসড়কে প্রবেশের আগেই লোড পরীক্ষা করার পরিকল্পনা চলছে। আর তার আগে যানবাহন মালিক ও চালকদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে সচেতন করার কাজে ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যান্য জনবল থাকবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেটরা সরাসরি অভিযানের মাধ্যমে ওভারলোড মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এ পদক্ষেপ ২-১ মাসের মধ্যেই কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এলাকা পুনরায় সংস্কার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই করে দিবে। বৃষ্টির কারণে ওই কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ কাজ করে দিবে। তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ম্যানেজার মো. নিজামুল ইসলাম নিজামের দাবি, ট্রাকের ওভারলোডের কারণেই এমনটি হয়েছে। ওভারলোড থাকা ট্রাক হঠাৎ ব্রেক করলে পিচ কার্পেটিং সরে গিয়ে এক জায়গায় ঢিপি তৈরি করছে। এর ফলে চেঙ্গুটিয়া এলাকায় সড়কের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই এলাকায় ট্রাকের চাপ একটু বেশিই থাকে। তিনি বলেন, ওভারলোডের পাশাপাশি মহাসড়ক সংস্কার ডিজাইনেও ত্রুটি রয়েছে। মহাসড়কে ৩০ টন লোড ক্যাপসিটি দিয়ে উন্নয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এ মহাসড়কে দ্বিগুন লোড নিয়ে ট্রাক চলে। এর ফলে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে। নিজস্ব সুনাম বজায় রাখতে তমা কনস্ট্রাকশন প্রকল্প মেয়াদের মধ্যেই এ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সংস্কার করে দেবে বলে জানান তিনি।