আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১২:৪০

যশোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সারি সারি সাজানো ফলের ঝুড়ি, ইচ্ছেমতো তুলে নিচ্ছেন যাত্রীরা

যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভারতফেরত যাত্রীদের জন্য ইমিগ্রেশনে বিনামূল্যে ফল, পানি ও শুকনা খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সোমবার (৭ জুন) থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশে ফেরা ক্লান্ত যাত্রীরা এমন আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনে আপেল-কলার ঝুড়ি সারি সারি সাজানো। ফলের পাশাপাশি শুকনা খাবার ও পানির বোতলও রাখা আছে। ভারত থেকে দেশে ফেরা যাত্রীরা মূল্য পরিশোধ ছাড়াই সেখান থেকে ইচ্ছেমতো এসব খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন।

পাশেই একটা প্ল্যাকার্ড। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘অপেক্ষারত যাত্রীগণ, আপনার প্রয়োজন অনুসারে টেবিল থেকে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করুন। আয়োজনে—জেলা প্রশাসন, যশোর।’

বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের কবলে পড়ে ভারতে আটকা পড়েছিলেন কয়েক হাজার যাত্রী। ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের ছাড়পত্র প্রদান জটিলতাসহ নানা দুর্ভোগের কারণে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন তারা। এমনকি বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করতে যাওয়া অনেকে সে দেশে অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হয়েছে। নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করার পর নতুন দুর্ভোগের মুখে পড়েন শতশত যাত্রী।

দুর্ভোগ লাঘবে ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের জন্য পানি, শুকনা খাবার ও ফলের ব্যবস্থা করতে লাখ টাকা বরাদ্দ দেন যশোর জেলা প্রশাসক।

ভারত থেকে ফেরা যাত্রী ঊষারাণী বলেন, দেহে ক্যান্সার ধরা পড়ার পরে বাংলাদেশে অনেক স্থানে চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু খুব একটা ভালো ফল পাইনি। সবশেষে গরু বিক্রির টাকা ও জমি বন্ধক দিয়ে ভারতে তিন মাস ধরে চিকিৎসা নিয়েছি। লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারিনি। এমনকি বাংলাদেশে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নিজ খরচে হোটেলে ১৪ দিনে থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো টাকা অবশিষ্ট নেই যে নিজ খরচে বাংলাদেশে এসে হোটেল ভাড়া দিয়ে তিনবেলা হোটেলে খেয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকব। এক পর্যায়ে ইমিগ্রেশন থেকে আমাদেরকে যশোর পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। সেখানে সরকারিভাবে থাকা ও খাবারের জন্য চাল দেয়া হচ্ছে। এটা আমাদের মতো মানুষের জন্য খুবই সহায়ক হয়েছে। তা নাহলে আমরা ও আমাদের মতো চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে আসা যাত্রীরা হতাশায় আরও মারা যেতেন।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজি মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদের দুর্বিষহ জীবনযাপনের কথা জানার পরে জেলা প্রশাসক নিজের ফান্ড থেকে পিটিআই ও ঝিকরগাছা লাউজানি গাজীর দরগা কোয়ারেন্টাইনে ৬ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। তাছাড়া ভারত থেকে দেশে প্রবেশের পরপরই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব টাকায় একজন যাত্রীর জন্য ৭০ টাকা মূল্যের এক প্যাকেট খাবার দেয়া হচ্ছে। প্যাকেটে থাকছে এক বোতল বিশুদ্ধ খাবার পানি, ফল ও শুকনো খাবার। সোমবার সারাদিন ভারত থেকে ফেরত আসা ৬৮ যাত্রীকে এসব বিশুদ্ধ পানি, ফল ও শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সরকারি কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদের প্রতিদিনের মাথাপিছু খরচের হারও কমানো হয়েছে। যেখানে সরকারি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা একজনের কাছ থেকে আগে নেয়া হতো ১৭০ টাকা। সেই হার কমিয়ে করা হয়েছে ১২০ টাকা। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকটা কমেছে। এখন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে যাত্রীদের আপত্তি নেই।

যশোর জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ভারত থেকে আসা যাত্রীদের দুর্বিষহ জীবনযাপনের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানার পর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদের খাবারের জন্য ৬ টন চাল দেয়া হয়েছে। পাশপাশি যাত্রীরা ভারত থেকে ইমিগ্রেশনে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার ও ফল দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

আরো সংবাদ