আজ - সোমবার, ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১০:৫৭

যশোর জেলা বিএনপির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ মিলন মেলায় পরিনত।

যশোরে বিএনপির নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহরতলীর জেসগার্ডেন পার্কে একটি ব্যতিক্রমী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার (১২ জানুয়ারি) এই আয়োজনে প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মী এবং শুভাকাঙ্খী অংশ নেন, যারা অতীতের কঠিন সময়গুলোতে দলটির প্রতি সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করেছিলেন। অনুষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে জেলা জামায়াতের আমিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজকরা জানান, এই অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অংশ নেন দলের শুভাকাঙ্খীরাও, যারা বৈরী সময়ে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। যেমন, আওয়ামী লীগ জামানায় বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে ব্যবহারের জন্য সাউন্ড সিস্টেম, ডেকোরেটর সামগ্রী, গাড়ি ভাড়া দেওয়া নিষেধ ছিল সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে। এরপরও গোপনে অনেক ব্যবসায়ী তাদের মাইক, গাড়ি, চেয়ার-টেবিল, শামিয়ানা-বাসন দিয়ে বিএনপিকে সহযোগিতা করেছেন। দলটি আজ তুলনামূলক ভালো সময়ে তাদের ভুলে যায়নি এবং মিলনমেলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

মিলনমেলায় দলের আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য বিশাল প্যান্ডেলে একসাথে খাবারের ব্যবস্থা ছিল। তবে যেসব নেতাকর্মী কারাগারে ছিলেন, তারা পাটিতে বসে একসাথে খাবার গ্রহণ করেন।

আয়োজকরা জানান, শহর ও সদর উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার নির্যাতিত মানুষের যোগ দেওয়ার কথা ছিল এই মিলনমেলায়। তবে শেষ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার মানুষ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যোগ দিয়েছিলেন সব উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতারাও।

অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার নামে ৪২টি মামলা। অনেকবার জেল খেটেছি। বাড়িতে হামলা হয়েছে কয়েক দফা। অন্য নেতাকর্মীদের অবস্থাও এমন। নির্যাতিত-নিপীড়িত নেতাকর্মীদের নিয়ে আজকের এই অভিনব আয়োজন।’ এসব আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল। তিনি বলেন, ‘এই আয়োজনের জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে ধন্যবাদ। বিএনপি ও জামায়াত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সবচেয়ে নির্যাতিত ছিল। একই মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আমরা একই সাথে ছিলাম, একই সাথে থাকবো।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জাতি যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিল, সেই ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে বলে আশা করছি। আজকের অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শ্রেণীপেশার মানুষকে দেখে খুব ভালো লেগেছে। বিএনপির ব্যতিক্রমী আয়োজনে দলটির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাঝে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আমি মনে করি।’

অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক নারীর উপস্থিতি দেখা যায়। জাতীয়তাবাদী মহিলাদলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও যেসব নারী বিপদের সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়েছেন, তারা এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।

বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘বিগত জুলুম নির্যাতনের দিনগুলিতে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না কত মানুষ আমাদের কতভাবে সহযোগিতা করেছেন। যারা নিজ বাড়িতে বিএনপি নেতাকর্মীদের দিন-রাত আশ্রয় দিয়ে নিরাপদে থাকতে সহযোগিতা করেছেন, আমরা তাদের ভুলতে পারি না। তাদেরকেও এখানে আনার চেষ্টা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আজকের প্রোগ্রামের বিষয়ে জানেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যস্ত না থাকলে হয়তো তিনি ভার্চুয়ালি এই মিলনমেলায় যুক্ত থাকতেন।’

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত