আজ - বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:৪৩

যশোর বোর্ডে এক দূর্নীতিবাজ কে তাড়িয়ে আরেক দূর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান!

যশোর বোর্ডের সচিব থাকাবস্থায় নথি চুরি, কলেজের টাকা নয়ছয় এবং বিভিন্ন সময় নারী কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগের মধ্যেই ড. মোল্লা আমীর হোসেন অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এরপর তাকে যশোর বোর্ডের সচিব পদ থেকে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বদলি করেছিল। সেখানে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে তিনি বদলি হন খুলনার সরকারি জয়বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ পদে। সব মিলিয়ে সচিব পদ থেকে বদলির এক বছর তিন মাসের মধ্যেই সেই ড. মোল্লা আমীর হোসেনকে যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে ফিরিয়ে এনেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গতকাল যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন। এর মাধ্যমে জুটেছে প্রাইজ পোস্টিং। বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল আলীমকে প্রেষণ প্রত্যাহার করে ওএসডি করা হয়েছে। একই সঙ্গে জারি করা অপর এক আদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক রসায়নের অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্ত্তীকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের উপাধ্যক্ষ ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দুর্নীতি ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ড. মোল্লা আমীর হোসেনকে হঠাৎ করে যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান করায় সেখানে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেছেন, যশোর বোর্ডের মতো পবিত্র জায়গায় ড. মোল্লা আমীরের মতো অপবিত্র লোককে কীভাবে পদায়ন দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়? মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের বদৌলতে ড. মোল্লা আমীর যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে ফিরে এসেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ড. মোল্লা আমীরকে প্রাইজ পোস্টিং দিতে গিয়ে বোর্ডটির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল আলীমকে ওএসডি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) সংযুক্ত করা হয়েছে। অথচ তার চাকরির মেয়াদ আছে মাত্র ১০ মাস।

বোর্ড সূত্রে জানা যায়, হাইস্পিড লেজার প্রিন্টার ও খাম ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ড. মোল্লা আমীর হোসেনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর যশোর জেলা জজ আদালতে এবং ৮ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে দুটি মামলা হয়। ওই মামলার দাপ্তরিক সব কাগজপত্র তার কাছেই সংরক্ষিত ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে অধ্যাপক পদে পদোন্নিত দেয়া হয়। কিন্তু দুই মামলা সংক্রান্ত দাপ্তরিক নথিপত্র বুঝিয়ে না দিয়ে তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য সে সময় ছাড়পত্র নিতে যান। এ সময় কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ছাড়পত্র দিতে বাধা দেন। বোর্ডে তাকে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এক পর্যায়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল আলীম সভা ডেকে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সভা চলাকালে মোল্লা আমীর হোসেন মামলা সংক্রান্ত নথিগুলোর ফটোকপি দেন। মূল কপি তার কাছে নেই বলে জানান। সভায় উপস্থিত সবাই মূল নথি চান, অন্যথায় অনাপত্তিপত্র দেয়ার পক্ষে মত দেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তাকে মাউশিতে যোগদানের অনুমতিপত্র দেয়া হয়। একই সঙ্গে নথি উদ্ধারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ রকমই এক অভিযুক্তকে বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিল সরকার।

এদিকে নানা অভিযোগ তদন্তে বেশ কিছুদিন থেকেই দুদকের একটি দল যশোর শিক্ষা বোর্ডে আনাগোনা করছিল। তবে কী বিষয়ে এ তদন্ত চলছিল তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এরপরই বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল আলীমকে ওএসডি করা হলো। আর দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তকে নতুন চেয়ারম্যান করে যশোর বোর্ডে ফিরিয়ে আনা হলো।

আরো সংবাদ