আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:৪৮

রিকশা চালিয়ে এসএসসি পাস করল বাবাহারা দুই ভাই।


স্টাফ রিপোর্টার।। বাবা ছেড়ে যাওয়ার পর দুই ভাইয়ের লেখাপড়া হুমকির মুখে পড়ে। অনেক দেনায় জর্জরিত ছিল আমাদের পরিবার। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ থাকায় রিকশা চালিয়ে লেখাপড়ার চালিয়ে গেছি দুই ভাই। যা আয় হয়েছে তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালানোর সঙ্গে সঙ্গে চালিয়েছি চারজনের সংসার। তবে খুব বেশি ভালো ফল আমরা করতে পারলাম না। তবুও যা হয়েছে তাই নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট। সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

রোববার (৩১ মে) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৪ ও জিপিএ-৩ পেয়েছে সংগ্রামী দুই ভাই নাইমুর রহমান ও ফাহিমুর রহমান।

খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর এলাকার কারিকর পাড়ার গৃহপরিচারিকা মুন্নী বেগমের দুই ছেলে নাইমুর রহমান ও ফাহিমুর রহমান। দুই মেয়েও রয়েছে তার। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন মুন্নী বেগম। আরেক মেয়ে পড়ছে তৃতীয় শ্রেণিতে।

নাইমুর পাস করেছে নগরীর আফিল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আর ছোট ভাই ফাহিমুর রহমান পাস করেছে মহসিন মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয় থেকে।

নাইমুর রহমান জানায়, বাবা (নাম বলতে চায়নি) অনেক দেনা করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এরপর আর কোনো খোঁজখবর রাখেননি বাবা। মাঝেমধ্যে মোবাইলে কথা হলেও বাড়িতে আসেন না। বাবা চলে যাবার পর মা গৃহপরিচারিকার কাজ করলেও তা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে মাকে সাহায্য করা এবং তিন ভাই-বোনের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য দুই ভাইকেই রিকশা চালানোর পথ বেছে নিতে হয়।

রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে আর লেখাপড়া করা সম্ভব হতো না। স্কুলে যা পড়তাম তাই ছিল মূল পড়া। কোচিং করার কথা কল্পনাও করতে পারিনি। তবে একজন হৃদয়বান বড় ভাই এগিয়ে আসেন লেখাপড়ায় সহায়তা করার জন্য। তিনি বিনামূল্যে আমাদের পড়িয়েছেন।

নাইমুর জানায়, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় দুই ভাইকেই পড়তে হয় সমস্যায়। টাকার অভাবে পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু এক বড় ভাই আমাদের করুণ অবস্থা শুনে ফরম পূরণের টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।

ফাহিম জানায়, কষ্ট হলেও আমরা পড়ালেখাটা চালিয়ে গেছি। মা আমাদের দুই ভাইকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। বর্তমানে দুই ভাই ইজিবাইক চালাই।

নাইমুর ও ফাহিমুরকে ফ্রি পড়াতেন খুলনার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের কর্মী জাফরি বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমি গর্বিত। এমন একটি ছেলেকে আমি নির্বাচন করেছিলাম। একদিন এই ছেলের রিকশায় চড়ে পাবলা থেকে খালিশপুর যাচ্ছিলাম। যেতে যেতে তার কথা শুনে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। ভাড়াও দিয়েছিলাম দ্বিগুণ। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সেই থেকে পরীক্ষা পর্যন্ত আমি ছেলেটাকে ফ্রি পড়িয়েছি। আর ফরম পূরণের সময় তাদের সহায়তা করেছি।

খুলনা মহানগর যুবলীগ নেতা মো. মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, অনেকের সহায়তায় দুই ভাই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা দুইজনের কলেজে ভর্তির দায়িত্ব নিয়েছেন। খুলনার যুবলীগের এক শীর্ষ নেতা তাদের দুই বছরের লেখাপড়ার খরচ দিতে চেয়েছেন।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত