আজ - বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৬:৪২

শত শত গোয়েন্দা ডুবোজাহাজ চীন সাগরে কী করছে?

ডেস্ক রিপোর্ট।। খবরটা প্রথম বেরিয়েছিল চীনের সরকারি সংবাদ মাধ্যমে। “সাগরে জাল ফেলে বিদেশি গুপ্তচর ড্রোন ধরার পর জেলেদের পুরস্কার দিলো চীন”- এই শিরোনামে খবরটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। তবে ব্যাপারটা আসলে অত সরল নয়।

এই পুরস্কার যে এক-দুজন জেলে পেয়েছে তা-ও নয়। মোট ১১ জন জেলে -তার মধ্যে একজন আবার নারী – সাগর থেকে সব মিলিয়ে ৭টি ‘গুপ্তচর সাবমেরিন ড্রোন’ ধরে এই পুরস্কার পেয়েছেন।

তাছাড়া এ ঘটনা খুব নতুনও নয়। ২০১৮ সালে এবং তার আগেও জিয়াংসু প্রদেশের জেলেরা স্পাই সাবমেরিন ড্রোন ধরা পড়েছে। পুরস্কারের অংকটাও কম নয় – ৫ লক্ষ ইউয়ান , যা ৭২,০০০ ডলারের সমান।

এগুলো আকারে খুব বেশি বড় নয়। আকাশে যেরকম সামরিক আক্রমণ বা নজরদারির জন্য চালকবিহীন ড্রোন আজকাল ব্যবহৃত হচ্ছে, সমুদ্রের পানিতে ঠিক একইভাবে কাজ করে এসব চালকবিহীন ছোট ছোট স্পাই সাবমেরিন ড্রোন।

কিন্তু চীন সাগরে এই ক্ষুদে সাবমেরিনগুলো আসছে কোথা থেকে? এরা কী করে? কেন এগুলো এত মূল্যবান? আর চীনা জেলেরা এত এত স্পাই সাবমেরিন ধরছেই বা কী করে?

স্পাই সাবমেরিনগুলো কোন দেশের তা চীন প্রকাশ করে না। তারা শুধু বলে, ‘এগুলো অন্য নানা দেশে তৈরি।’

পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের উপকুল ১,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর অন্য দিকে আছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান। এখানে প্রবল উপস্থিতি রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও।

আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্ডার নিল বলেন, এই জায়গাটায় সবসময়ই শক্তিধর দেশগুলো প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তার কথা, সম্ভবত এসব ড্রোন সাবমেরিনগুলো আসে মার্কিন নৌবাহিনী, জাপানের আত্মরক্ষামূলক বাহিনী অথবা তাইওয়ান থেকে।

কিন্তু এগুলো দিয়ে কি ধরণের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে আমেরিকান, জাপানি বা তাইওয়ানিরা?

২০০৯ সালে মার্কিন নৌবাহিনী একটি গবেষণা চালিয়েছিল ইউইউভি বা আনম্যানড আন্ডারসি ভেহিকলস নিয়ে।

তারা বলেছে – এগুলো ব্যবহৃত হতে পারে শত্রুপক্ষের সাবমেরিনের গতিবিধির খবর পেতে, পানির নিচে বিশেষত অন্য দেশের সমুদ্রসীমার ভেতরে কোনো বোমা পাতা আছে কিনা তা জানতে, নজরদারির যন্ত্রপাতি মোতায়েন করতে, বা সাগরের নিচে ক্যাবলের মতো যেসব অবকাঠামো আছে তার তত্ত্বাবধান করতে।

এতে বলা হয়, সাগরের নিচে এরকম শত শত স্পাই ড্রোন সাবমেরিন মোতায়েন আছে। এগুলো কয়েক মাস ধরে কার্যকর রাখা যায়, এবং এর খরচও খুব বেশি নয়, তাই এগুলো দু-চারটা ধরা পড়লে কিছু আসে যায় না।

এ থেকেই বোঝা যায় কেন চীনা জেলেদের জালে এসব সাবমেরিন ড্রোন ধরা পড়ছে।

চীনা জেলেদের সংখ্যা বিপুল, তা ছাড়া কিছু জেলে সামরিক বাহিনীর হয়েও কাজ করে। চীনের জাতীয় মিলিশিয়ার একটি অংশ হচ্ছে এই মেরিটাইম মিলিশিয়া।

নিল বলছেন, তার মানে হলো যাদের হাতে এসব স্পাই সাবমেরিন ধরা পড়ছে তারা আসলে জেলের ছদ্মবেশে চীনা মিলিশিয়া। তাদের মাছধরার ট্রলারগুলো অন্যরকম, এগুলো কাঠের তৈরি নয়, বরং ইস্পাতের তৈরি। তাদের সিগনালিং ক্ষমতা আছে, চীনা নৌবাহিনী সাথে তাদের যোগাযোগ আছে। সাগরে তাদের আসল কাজই হলো নজরদারি, এবং তাদের একটা কাজ হয়তো এসব স্পাই সাবমেরিন ধরা।

শুধু তারা যে শত্রুপক্ষের ড্রোন সাবমেরিন ধরে তাই নয়, চীনের নিজস্ব ড্রোন সাবমেরিনও আছে। চীনের সামরিক প্যারেডেও এরকম ড্রোন দেখা গেছে। এগুলো দিয়ে ছোট ড্রোন সাবমেরিন বহন ও মোতায়েন করা যায়।

প্রায় পাঁচ মাস আগে ইন্দোনেশিয়র জেলেদের জালে চীনা অক্ষর লেখা একটি সামুদ্রিক ড্রোন আটকা পড়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, চীন এগুলো দিয়ে সাগরের নিচে আরেকটা ‘মহাপ্রাচীর’ গড়ে তুলছে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরো সংবাদ