আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ২:০৪

শার্শায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে ও তালাক

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শাহানাজ। বয়স মাত্র ১১ বছর। এই বয়সেই তার বিয়ে ও তালাক দুইই সম্পন্ন। আর এর পেছনে ছিল কথিত সমাজপতিদের বাণিজ্য।

যশোরের শার্শা উপজেলার পারিখুপী গ্রামের রুপশা পাড়ার আবু হানিফের মেয়ে শাহানাজ নিজামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। বেড়ী নারায়নপুরের নুর মোহাম্মদ কবিরাজের পুত্র মাসুম বিল্লাহের সাথে তার বিবাহ দেন সমাজপতিরা। এজন্য তাদের গুনতে হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। বিয়ের পর যৌতুক দিতে হয় আরো ৫০ হাজার টাকা। তবে বিয়ে টিকলো না। শাহানাজ সংসার করতে চাইলেও তার কপালে জুটেছে তালাক। বিয়ের পর সংসারের সময় মাত্র কিছু দিন। এই সময়ে মাসুম বিল্লাহের পরিবার এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তালাক সম্পন্ন করে। তবে তাতে কনে পক্ষ পেয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। মীমাংসার নামে সমাজপতিরা সেখান থেকে পুলিশের নামে ২০ হাজার টাকা কেটে রাখে। আর পরে সমাজপতিদের এক অংশ ১০ হাজার টাকা চাঁদা বাবদ জোর করে আদায় করে।

শাহানাজ জানায়, তার বিয়ের বয়স না হলেও সে সংসার করতে আগ্রহী ছিল। তবে তালাক হয়েছে। এখন তার পরিবার লেখাপড়া করাতে চায়। সে জানায় তার বয়সে আর যেন কোন কিশোরী মেয়ের বিয়ে না হয়। তার মতে লেখাপড়া করাটা এজন্য খুবই জরুরী। স্কুল বন্ধ থাকার কারনেই তার জীবনে এত বড় দুঘর্টনা ঘটেছে। এখন সে আবার লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে চায়।

শাহানাজের ভাই আব্দুল হাকিম জানায়, তারা বোনের বিয়েতে মোটেও আগ্রহী ছিলো না। তবে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে বোনের সংসার টিকিয়ে রাখতে তারা যৌতুকের টাকা দেয় অর্ধলাখ। তবে শেষ পর্যন্ত সংসার না টিকে তালাক হয়েছে।

সুবর্নখালীর আমিরুল মেম্বর, নারায়নপুরের আলিম, বেড়ির দাউদ মোড়লের পুত্র আসাদুল ও একই গ্রামের আকবর হোসেনের পুত্র শহিদুল সমাজপতি হিসেবে শাহানাজের বিবাহ ও তালাক পর্ব সম্পন্ন করে।

মাসুম বিল্লাহ জানায়, শাহানাজকে সে তালাক দিতে চায়নি। তবে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত দিলে তারা তা থেকে আর বের হওয়ার পথ পায়নি। এরাই তাদের বিয়ে দিয়েছিল। এমনকি বাল্য বিবাহ নির্বিঘ্ন করতে তারাই কাগজপত্রে বয়স ঠিকঠাক করে দিয়েছিল।

মাসুম বিল্লাহের পিতা নুর মোহাম্মদ কবিরাজ বলেন, গরু ও মাঠের সম্বল ১৫ কাঠা জমি বিক্রি করে তাকে টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। তিনি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তার পুত্র মাসুম বিল্লাহ একটি ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর দোকানে কাজ করে। সেখান থেকেই শাহানাজের বাড়ি তার যাতায়াত। পরে যাওয়া আসা পুঁজি করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাদের বিয়ে দেয়। সেখানে আর্থিক লেনদেন হয়েছে।

শাহানাজের বিয়ে ও তালাকা সম্পর্কে আমিরুল মেম্বার জানান, ওরা পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে করেছিল। পরে বনিবনা না হওয়ায় তারা খোলা তালাকে মীমাংষা করেছে। তবে টাকার বিষয়ে ও কাবিননামা পরিশোধের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

আরো সংবাদ