আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৯:৫৯

১২-১৩ এপ্রিল দূরপাল্লার বাস চলবে না : জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে চলছে সরকারের দেওয়া দেশব্যাপী ‘কঠোর বিধিনিষেধ’। এই বিধিনিষেধ শেষ হচ্ছে রোববার। আগামী সোম ও মঙ্গলবার অর্থাৎ ১২ ও ১৩ এপ্রিল বাদে এক সপ্তাহের জন্য ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ পথে হাঁটবে সরকার। এই এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি সেবা ব্যতিত অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম বন্ধ রাখবে সরকার।
 
এখন প্রশ্ন উঠেছে, সর্বাত্মক লকডাউনের আগের দুদিন অর্থাৎ ১২ ও ১৩ এপ্রিল কী হবে? মানুষ ইচ্ছেমতো চলাচল করতে পারবে, নাকি পারবে না? দূরপাল্লার বাস চলবে, নাকি চলবে না? শুধু তাই নয়, যেহেতু ওই দুদিনের জন্য এখন পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ বা সর্বাত্মক লকডাউনের কথা ঘোষণা করেনি সরকার; সেহেতু সব মুক্তভাবেই চলবে নাকি নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করা হবে- এসব প্রশ্নও রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
 
শনিবার সকালে অন্তরা রায় নামের এক নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, ১২ ও ১৩ এপ্রিলের মধ্যে তিনি কি সাতক্ষীরা থেকে মাদারীপুর যেতে পারবেন?
এই প্রশ্নটাই করা হয়েছিল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এমন সুযোগ থাকবে না। কারণ, সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে; তাতে দূরপাল্লার গাড়ি চলতে দিলে মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাবে। কেউ ঢাকা ছাড়বে, কেউবা আবার ঢাকায় ঢুকবে। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষ চলাচল শুরু করবে। এই পরিস্থিতিতে সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দূরপাল্লার বাস চলার সুযোগ দিলে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। সুতরাং দূরপাল্লার বাস চলবে বলে আমার মনে হয় না।’

১২ ও ১৩ এপ্রিলের জন্য বিশেষ কোনো নির্দেশনা থাকবে কি না- এমন প্রশ্নে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘রোববার আমরা বৈঠকে বসব। সেখানে সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। কোন পরিস্থিতিতে মাঝের দুদিন চলবে, তাও নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া সর্বাত্মক লকডাউনের সময় কী কী করা যাবে, কী করা যাবে না সেই সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত করা হবে। ১২ ও ১৩ এপ্রিল নিয়ে হয়তো আমরা কিছু বিধিনিষেধ জারি করতে পারি। এখন যে অবস্থায় চলছে, মাঝের দুদিনও হয়তো সেই অবস্থাতেই চলবে। তার মানে, সীমিত পরিসরে সবকিছু চললেও কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ থাকতে পারে।’
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘দূরপাল্লার বাস চলবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনও গ্রহণ করা হয়নি। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। সরকার যদি চালাতে বলে, আমরা চালাব। নিষেধ করলে, যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থাই বলবৎ থাকবে। তবে আমার মনে হয় না, সরকার দূরপাল্লার বাস চলার সিদ্ধান্ত নেবে।’
 
দূরপাল্লার বাস চলাচলের কোনো যাত্রী গ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার জন্য কাউন্টারে যোগাযোগ করেছে কি না জানতে চাইলে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার এসপি গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের ব্যাপস্থাপক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই যোগাযোগ করেছেন কিন্তু আমরা কাউকে টিকিট দেইনি। কারণ, মালিকদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি আমাদের। আমাদের টিকেট ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব থাকে অনলাইনে, এখন অনলাইনের সিস্টেম ব্লক করা।’
 
একই বাস সার্ভিসের রাজধানীর কল্যাণপুর কাউন্টারের ব্যাবস্থাপক বাবু আহমেদ বলেন, ‘১২ ও ১৩ তারিখের ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়ার কোনো টিকিট আমরা ছাড়িনি। তবে টিকিটের জন্য অনেকেই ফোন দিচ্ছে। কিন্তু বাস চলবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি।’
 
শনিবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় ভিন্ন এক চিত্র। শ্রমজীবী কিছু মানুষকে ফুটপাতে বসে থাকতে দেখা গেছে। তারা সবাই ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিজেদের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে বসে আছেন। রাতে কারওয়ান বাজারে পণ্য নিয়ে ট্রাক আসে। সেই ট্রাক পণ্য রেখে আবার ফিরে যায় জেলায় জেলায়। সেই ফিরতি ট্রাকের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
 
এদের মধ্যে রিকশাচালক মজিবুর মিয়া যাবেন রাজশাহীতে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাস বন্ধ। লকডাউনের মধ্যে বাস হয়তো চলবে না। তাই ট্রাকের অপেক্ষায় বসে আছি। কারওয়ান বাজার থেকে ট্রাক বের হলে ওই ট্রাকে চলে যাব রাজশাহী। একটি ট্রাকের ড্রাইভারের সঙ্গে কথা হয়েছে। রোজা রাখি তো বাবা, এখানে রোজার সময় থাকার সমস্যা। রোজা হয়ে গেলে আবার ঢাকায় ফিরব।’
 
শহিদুল ইসলাম ঢাকায় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনিও কাজ না থাকায় গ্রামে চলে যাবেন। শহিদুল বলেন, ‘আমি যাব গাইবান্ধায়। এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। ট্রাক পেলেই চলে যাব। বাস চললে ভাল হতো। কিন্তু বাস না চলায় ট্রাকে যেতে হবে। লকডাউন কেটে গেলে আবার ফিরে আসব।’
 
করোনার সংক্রমণ দিনে দিনে বাড়ছে। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এই হিসাব মাথায় নিয়ে সরকার আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই লকডাউনে কী করা যাবে, কী করা যাবে না তাই নিয়ে রোববারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কী ধরনের সিদ্ধান্ত হতে পারে, তা জানতে গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.  মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
 
গতকাল রাতে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছিলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তা ছাড়া পরামর্শক কমিটি আরও বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেসব পরামর্শ নিয়ে ভেবেছে। তারপর কঠোর লকডাউনের এ সিদ্ধান্ত। আগামীতে যে লকডাউনের কথা চিন্তা করছে সরকার, তা অনেক কঠোর হবে। প্রয়োজনে মানুষকে লকডাউন মানাতে কঠোর হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। মোদ্দাকথা হচ্ছে, মানুষকে ঘরে রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
 
এসব নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেকটি সূত্রের সঙ্গেও হয় এই প্রতিবেদকের। গত শুক্রবার রাতে সূত্রটি বলেছিল, এখন যেটা চলছে সেটাকে লকডাউন বলেন আর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ বলেন; তা চলছে খুবই ঢিলেঢালাভাবে। এভাবে আসলে করোনা পরিস্থিতিকে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
 
সূত্রটি বলেছিল, বর্তমানে সব ধরনের গণপরিবহন চলছে। বাজার, শপিংমল খোলা। অফিস–আদালত, ব্যাংক, বিমা সবকিছুই খোলা। বেসরকারি খাতের সবকিছুই খোলা। খোলা রয়েছে শিল্প-কলকারখানাও। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এসব কোনো কিছুই চলবে না। অর্থাৎ সব কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। তেমন নির্দেশনা রোববার সরকার দিয়ে দেবে।
 
সূত্রটি আরও বলেছিল, তবে জরুরি সেবার ব্যাপারটা চলমান থাকবে। নতুবা মানুষ তাঁর মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারবে না। ফলে জরুরি সেবার আওয়াতায় ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। সিমিত পরিসরে খোলা থাকবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু দোকানপাট। শুধু তাই নয়, জরুরি সেবা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, স্বাস্থ্য, ত্রাণ বিতরণ, ইন্টারনেট, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আনা–নেওয়া ও এর সঙ্গে জড়িত অফিসগুলো খোলা থাকবে। তবে এসব খোলা রাখার ব্যাপারেও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত