শফিকুল ইসলাম (ঢাকা,অফিস) : বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, কেন জোট ছাড়লেন এই নেতা?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ১৯৯৯ সাল থেকে চার দলীয় জোটে এবং পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর হতে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমশই স্থবির হয়ে পড়ে। তারই প্রভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পার্থ।
সোমবার দলীয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এ ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পার্থ জানিয়েছেন, বিরোধীদলীয় রাজনীতি অতিমাত্রায় ঐক্যফ্রন্টমুখী হওয়ায় ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরবর্তীতে সরকারের সঙ্গে সংলাপসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ২০ দলীয় জোটের বিএনপি ছাড়া অন্যকোনো দলের সম্পৃক্ততা ছিল না।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, কেবল সংহতি এবং সহমত পোষণের জন্য ২০ দলীয় জোটের সভা ডাকা হত। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০ দলীয় জোটের সবার সম্মতিক্রমে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখান করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রথমে ঐক্যফ্রন্টের দুইজন এবং বিএনপির সম্মতিতে দলটির চারজন সংসদ সদস্য শপথ নেয়ায় দেশবাসীর মতো বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিও অবাক এবং হতবাক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শপথ নেয়ার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিএনপি ছাড়া ২০ দলের অন্য কোনেরা দলের সম্পৃক্ততা নেই। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) মনে করে এই শপথের মাধ্যমে বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট ৩০শে ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনকে প্রত্যাখান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।
এমতাবস্থায় ২০ দলীয় জোটের বিদ্যমান রাজনীতি পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ২০ দলীয় জোটের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার পার্থের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিজেপির মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ খানজাহান আলী ২৪/৭ নিউজ কে বলেন, বিশ দলকে পাশ কাটিয়ে তারা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা তাদের থেকে অবজ্ঞা অবহেলার শিকার হয়েছি।
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বর্জন করেও তারা সংসদে যোগ দিয়েছে। অথচ বলে আসছে যে, তারা সংসদে যাবে না। তারা যে সংসদে যোগ দেবে সে বিষয়ে ২০ দলের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি।
তবে নতুন জোটে যাবার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, আপাতত কোনো জোটে যাচ্ছি না। আমরা আমাদের দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত থাকবো।
উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জু ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র। তাঁর মা শেখ রেবা রহমান শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বোন।
২০০০ সাল থেকে আন্দালিব রহমান পার্থ তার বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জুর সাথে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৪ সালে তাঁর বাবার মৃত্যু হলে আন্দালিব বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে পরাজিত করে বিজয়ী হন।
তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার জোট প্রধান বিএনপির নেতৃত্বে নির্বাচন বয়কট করে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৭ আসনে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে পরাজিত হন।