বিশেষ প্রতিনিধি : ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে মুরাদ হোসেন নামে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে বেদম মারপিট করেছে একদল দুর্বৃত্ত। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসের বাণিজ্য ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। মুরাদ হোসেন প্রথম আলো যশোর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। তিনি যশোরের শার্শা উপজেলার জামতলা গ্রামের বাসিন্দা। যশোর শহরের খড়কি এলাকার ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করেন।
মারপিটের ঘটনাটি তদন্ত করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গড়েছে। রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আবদুল আলিমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুরাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা জমা দেওয়ার জন্যে আমরা কলেজ কার্যালয়ে যাই। এ সময় জুনিয়র একটি ছেলে সিনিয়র কয়েকজনের সঙ্গে খারাপ ভাষায় কথা বলে। ঘটনার প্রতিবাদ করলে ওই ছেলেটি ফোন করে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ আসাদ হল থেকে কয়েকজনকে ডেকে আনে। তারা ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে আমাকে বেদম মারধর শুরু করে। এ সময় রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল আলিমসহ (তদন্ত কমিটির প্রধান) সহপাঠীরা তাদেরকে নিবৃত করেন।’
এ ব্যাপারে এমএম কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে কেউ মুরাদকে মারধর করতে পারে। ছাত্রলীগের কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল আলিম বলেন, ‘আমি রসায়ন বিভাগ থেকে অধ্যক্ষ মহোদয়ের কক্ষের দিকে যাওয়ার সময় দেখি ৪-৫ জন মিলে মুরাদ নামে ওই ছাত্রকে মারধর করছে। আমি এগিয়ে যেতেই ওই ছেলেগুলো পালিয়ে যায়। বিষয়টি তদন্ত করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আহত ওই ছাত্রের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।’
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘মুরাদের মাথা ও গোপনাঙ্গে আঘাত লেগেছে। মাথায় সিটি স্ক্যান, আলন্ট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে আসার পরে বলা যাবে অবস্থা কতটা গুরুতর।’
যশোর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হক বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, ঘটনার ব্যাপারে সোমবার বিকেলে প্রথম আলো যশোর বন্ধুসভা জরুরি বৈঠকে বসে। বন্ধুসভার সভাপতি লাকিরানী কাপুড়িয়ার সভাপতিত্বে প্রথম আলো কার্যালয়ে বৈঠকটি হয়। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় বৈঠক থেকে।