আজ - বুধবার, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - বিকাল ৫:৩১

অচিরেয় ক্ষমা পাচ্ছেন আ.লীগের বিদ্রোহীরা

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেসব বিদ্রোহীরা অবস্থান নিয়েছেন তাদেরকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই ক্ষমা করে দেয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনীত নৌকার প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি।

সেই কারণে দলের সাংগঠনিক অবস্থা আরো জোরদার করার লক্ষ্যে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিদ্রোহীদের ক্ষমা করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে দলের হাইকমাণ্ডে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীকে অবশ্যই নৌকার মাঝির পক্ষে কাজের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তবে স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতা-উপনেতাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে তা মিমাংসা করবে কেন্দ্রের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

তারা বলেন, আওয়ামী লীগ যারা করেন তারা সবাই নৌকার (দ্বাদশ নির্বাচনে) পক্ষেই থাকবেন। এখন পর্যন্ত কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি, পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিদ্রোহীরা দলীয় পদ ফিরে পেলেও আর কোনো নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা।

দলীয় সূত্র জানায়, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পাঁচ ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর মাত্র দুই ধাপ বাকি রয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি ৬ষ্ঠ ধাপ ও ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সর্বশেষ সপ্তম ধাপের নির্বাচন। এর আগে দেশের অধিকাংশ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ইউপি, পৌরসভা ও জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করা হয়। তবে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে এসব নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা গেছে। অনেক ইউপিকে শুধু নির্বাচনে অংশ নয়, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ও ছিনিয়ে নিয়েছে।

দলের একাধিক নেতা জানান, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সারা দেশে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তারা অনেকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। কেউ ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা সম্পাদকমণ্ডলীর পদে। আবার কেউ ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে।

দীর্ঘদিন দলের দুঃসময়েও তারা সঙ্গে ছিলেন। দলের কাছে মনোনয়নও চেয়েছিলেন কিন্তু নৌকা তো দেয়া হবে একজনকে। তাহলে বাকীরা কী করবেন। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক না পেয়ে অনেকেই রাগ-অভিমান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করেন। বিদ্রোহীদের জয়জয়কার হওয়ায় ইতোমধ্যে অনেককেই উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি কিংবা বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। আবার কাউকে কাউকে অব্যাহতি কিংবা পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

দলের সিনিয়র নেতারা আরো বলেন, নির্বাচনে ইউপি নির্বাচনে দুই ধাপ বাকী থাকলেও বিদ্রোহীদের ব্যাপারেও দলের হাইকমাণ্ড পজেটিভ চিন্তা-ভাবনা করছেন। এই নিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বে যারা আছেন তাদের কাছ থেকে মাঠ পর্যায়ে দলের অবস্থা কী-সেই রিপোর্ট নিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এই রিপোর্ট পেয়েই দলের সভাপতি কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন নিদের্শেনা দিয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই দলের সাংগঠনিক অবস্থা জোরদারের কথা বলেন সভানেত্রী। আর যারা বিদ্রোহী ছিলেন তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়ার নিদের্শ দেয়া হয়েছে বলে নেতারা জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘একাদশ নির্বাচনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে দ্বাদশ। সেখানে বিএনপিসহ সব দল অংশ নিবেন। সেই ক্ষেত্রে নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে তৃণমূলের ঐক্যের বড় প্রয়োজন। বর্তমান নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূলের যে সব সমস্যা ছিল তা প্রকাশ পেয়েছে। এখন কেন্দ্রের দায়িত্ব হল—তা সমাধান করা।

সেদিক বিবেচনা করে নেত্রী আগেই নিদের্শনা দিয়েছেন। দ্বাদশ নির্বাচনে প্রায় দুই বছর বাকী থাকলেও আওয়ামী লীগ কিন্তু তা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনের কারণে যাদেরকে বহিষ্কার বা দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদের চলতি বছরের শেষ সময় পর্যন্ত দলের বাহিরে রাখা হবে। আগামী বছরের শুরুতেই স্বপদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এক বছর আওয়ামী লীগের পদের বাহিরে থাকা মানে অনেক বড় শাস্তি। যে বহিষ্কার হয়েছেন সে বুঝে তার জন্য কত বড় শাস্তি। আর গণমাধ্যমে চোখে বিদ্রোহী দেখলেও আমরা জনগণের অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন দেখছি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময় জাতীয় নির্বাচনের আগে ও শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ায়, ঐক্যবদ্ধ হয়, গুরুত্ব অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে কখনো ভুল করে না। এবারের যে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হয়েছে আসলে সেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেউ ছিলেন না।

অন্য কোনো দলের অংশগ্রহণ ছিল না। সে কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন চাওয়া হয়। এই নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করেছে, যা আমরা সব চাইতে গুরুত্ব দিয়েছি। আবার দলের প্রার্থীর বাহিরেও নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিল, সেটাতেও আমাদের কঠোর অবস্থান ছিল, শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়।

সব মিলিয়ে ভালো-মন্দ বিবেচনা করেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেশের জন্য, দলের জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য যেটা ভালো সেই বিষয়টি বিবেচনা নিয়েই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আরো বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখনো প্রায় দুই বছরের মতো বাকী আছে। এখন পর্যন্ত দলের যে সিদ্ধান্ত আছে সেই অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যারা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলের নেতাকর্মী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আরো কেউ কেউ পরোক্ষভাবে আছে কী-না সেটাও খুঁজে বের করা হচ্ছে। তবে দ্বাদশ সংসদ নিয়ে কী ভাবনা হবে? কী সিদ্ধান্ত হবে? সেটা আরো পরে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে—কী হবে তাদের বিষয়ে। এখন বলা যাবে না। আওয়ামী লীগ যারা করেন তারা সবাই নৌকার (দ্বাদশ নির্বাচনে) পক্ষেই থাকবেন। এখন পর্যন্ত কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি, পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অব্যাহতি তুলে নেয়া হবে কী না তা কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত হবে।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সাত ধাপের মধ্যে পাঁচ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পঞ্চম ধাপে ৭০৮টির মধ্যে ৬৯২ ইউপির চূড়ান্ত ফল জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১৩টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। ৩৪৬টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন ৩৪১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। চতুর্থ ধাপে ৭৯৭টি ইউনিয়ন পরিষদে সরাসরি ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৩৫০টিতে। পক্ষান্তরে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৩৮৯টিতে।

তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ১০০৮ ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫২৫টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন। বিপরীতে ৪৮৩টি ইউপিতে স্বতন্ত্রসহ অনান্য দল থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৪টির মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪৮৬টি ইউপি ও ৩৪৮টি ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। প্রথম ধাপে ২০৪ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের ১৪৮টিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছেন।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র থেকে ৪৯ জন এবং তিনটি বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে বাকী ৭ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন। এই পাঁচ ধাপের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশি জয়ী হয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী। মনোনয়ন না পেয়ে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

সুত্র: মানবকন্ঠ

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত