জ্বরে আক্রান্ত পুত্রবধূকে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর অচেতন করে শ্বশুর ধর্ষণ করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা। এমনকি বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য পুত্রবধূকে বিয়ে করতে চান শ্বশুর।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার অফিসের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা এ তথ্য জানান। এর আগে সকালে পুত্রবধূকে ধর্ষণকারী সেই শ্বশুর ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রাম থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন, উপজেলার উত্তর তালুকপলাশী গ্রামের ওই শ্বশুর (৪৮) ও তার এক সহযোগী (৫২)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উত্তর তালুকপলাশী গ্রামের অটোচালক ৩ মাস আগে প্রতিবেশী এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে নববধূ শ্বশুরবাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। স্বামী দিনের বেলায় অটো চালাতে বাইরে ব্যস্ত থাকেন।
তার শাশুড়িও অন্যের বাড়িতে কাজে যান। এ অবস্থায় শ্বশুর ও পুত্রবধূ বাড়িতে থাকেন। গত সপ্তাহে নববধূ জ্বরে আক্রান্ত হলে ওষুধ এনে দেন অভিযুক্ত শ্বশুর। এ সময় নববধূকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণ করেন তিনি।
পরের দিনও শ্বশুর তাকে কুপ্রস্তাব দিলে পুত্রবধূ রাজি না হওয়ায় শ্বশুর মারধর করলে চোখে আঘাত পান তিনি। অবশেষে দ্বিতীয় দফায় পুত্রবধূকে ধর্ষণ করেন লম্পট শ্বশুর। এভাবে সপ্তাহ ধরে ধর্ষণের শিকার নববধূ বিষয়টি তার স্বামী ও শাশুড়িকে জানান।
শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) স্বামী অটোরিকশা নিয়ে বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরে এসে নিজ চোখে অপকর্ম দেখে বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হন। এ সময় লম্পট বাবাকে ধাওয়া করেও ধরতে পারেনি তিনি।
৫ ডিসেম্বর বিষয়টি নিয়ে বাবা-ছেলের মাঝে বিতর্ক হলে নিজবাড়িতে প্রকাশ্যে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান অটোচালক। এ সময় চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আদিতমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নির্যাতিত নববধূর অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ঘটনার তদন্তে নামে থানা পুলিশ। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় একটি মহল নববধূকে জিম্মি করে রাখে।
অবশেষে গতকাল সোমবার থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে নববধূকে উদ্ধার করে। মঙ্গলবার সকালে মহিষাশ্বহর গ্রামে বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা শ্বশুর ও তাকে পালাতে সহায়তাকারী বড় ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নির্যাতিতা নববধূর দেওয়া জবানবন্দি মূলে এ ঘটনায় ওই নববধূর বাবা বাদী হয়ে অভিযুক্ত শ্বশুরকে প্রধান করে ৪ জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) আদিতমারী থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানায়, লম্পট ওই শ্বশুর অনেক মেয়ের এমন সর্বনাশ করেছেন। একাধিক গ্রাম্যবিচারে তাকে সতর্ক করা হলেও তার চরিত্রের কোনো সংশোধন হয়নি।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন, নববধূ ধর্ষণের মামলায় প্রধান আসামি শ্বশুর ও তাকে পালাতে সহায়তাকারী তার বড় ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দুই আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।