বৃহষ্পতিবার থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে বাঁকড়া ডিগ্রী কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী তামান্না নূরা। জন্মপ্রতিবন্ধি তামান্নার দুটি হাত ও একটি পা নেই। আদম্য এই মেধাবী ছাত্রী তামান্না অন্য শিক্ষার্থীদের মত হেঁটে-চলে বেড়াতে পারে না। হুইল চেয়ার আর পিতা-মাতা অথবা কোন সহপাঠির জন্য তার প্রতিদিন অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি কৃতিত্বের সাথে জয়ের পরে এবার এইচএসসি জয়ের স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে।
শারিরীক প্রতিবন্ধি তামান্নার একটি পা-ই সম্বল। পা দিয়ে লিখে ইতিমধ্যে পি.এস.সি, জে.এস.সি ও এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে জিপিএ-৫ পেয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে প্রচার মাধ্যেমে আলোচিত হয়েছে তামান্না নূরা। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মেধাবী ছাত্রী তামান্না নুরা চলতি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সাফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভাল ফলাফল করবে বলে আশা করেছে তার পিতা-মাতা, শিক্ষক ও সহপাটি বন্ধুরা।
তামান্নার পারবারিকভাবে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে জন্ম গ্রহন করে একটি কন্যা শিশু । যার দুটি হাত ও একটি পা নেই। শিশুটির বাবা যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউপির আলিপুর গ্রামের রওশন আলী ও মাতা খাদিজা পারভিন শিল্পি। মায়ের জ্ঞান ফিরে দেখেন তার জন্ম দেওয়া কন্যা শিশুটির দুটি হাত ও একটি পা নেই।
তবুও মা-বাবার প্রথম সন্তান হওয়ায় শিশুটিকে সাদরে গ্রহণ করে তারা। বাসায় ফিরে সামাজিক ভাবে অনেক প্রতিকুল অবস্থার মোকাবেলা করতে হয়েছে। দারিদ্রতার সংসার, বেকার স্বামী-স্ত্রী। বেড়ে উঠা শিশুটির চাহনি, মেধা মায়ের মনে সাহস যোগান দিয়েছিল। মায়ের কাছে প্রথমে অক্ষর জ্ঞান নিতে থাকে। বাসা থেকে দূরবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা তাদের জন্য সহজ ছিল না। বাসা সংলগ্ন শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজমাইন এডাস স্কুলের কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করেনেন নার্সারি শ্রেনিতে।
মা স্কুলের ক্লাসে বাচ্চাকে বসিয়ে দিয়ে ক্লাসের বাইরে অবস্থান করতেন। তার শ্রবনশক্তি ও মুখস্থ শক্তি এত ভালছিল যে একবার শুনলে বিষয় আয়ত্ব ও মুখস্থ বলতে পারত। অক্ষর লেখা শুরু করে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে চক ধরে। তারপর কলম ধরিয়ে লেখা আয়ত্ব করতে শুরু করে তামান্না নুরা। বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, আঙ্গুলের ফাকে চিরুনি, চামচ দিয়ে খাওয়া, চুল আঁচড়ানো সহজে আয়ত্ব করে সে। ধীরে ধীরে নিজের ব্যবহারিত হুইল চেয়ারটি এক পা দিয়ে চালানোর দক্ষতা সকলের নজরে আসে। নিজ বিদ্যালয়ে কেজি, প্রথম শ্রেনি থেকে পঞ্চম শ্রেনিতে ফলাফলে মেধা তালিকার পাশাপাশি এডাস বৃত্তি পরিক্ষায় প্রতিবার সে বৃত্তি পেয়েছি।
লেখাপড়ার ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আজমাইন এডাস স্কুল থেকে পি.এস.সি, ২০১৬ সালে বাঁকড়া জে.কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও একই স্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। চলতি বছরে সে বাঁকড়া ডিগ্রী কলেজে কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে। বৃহষ্পতিবার সে পদার্থ বিদ্যা বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে।
পরীক্ষা শেষে তামান্না এ প্রতিনিধিকে জানায়, খুব সুন্দর পরীক্ষা দিয়েছি। প্রায় সবই অংশ, যে কারণে স্যার নম্বর কাটতে পারবে বলে মনে হয় না। পূর্ণ নম্বর পাবে বলে সে আশাবাদী। তামান্নার পিতা রওশন আলী জানান, করোনাকালীণ সময়ে সকলে বসে থাকলেও তামান্ন ব্যাপক পড়াশুনা করেছে। আশা করি সে কৃতিত্বের সাথে খুব ভাল ফলাফল করবে।