অফিসে চার বোতল টাকিলা বিদেশি মদ রাখার অপরাধে কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি পুলিশের সাইবার তদন্ত শাখার উপ-পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার সিকদার বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন। মামলাটি তদন্ত করছেন সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক জামাল উদ্দিন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রয়েছে।
মঙ্গলবার মামলার বাদী সিআইডি পুলিশের সাইবার তদন্ত শাখার উপ-পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার সিকদার বলেন, ২০১৮ সালের ৬ জুন পান্থপথের আর্ব এন্টারটেইনমেন্ট তেজগাঁও থানার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরকে গ্রেফতার করি। গ্রেফতারের সময় আসিফ আকবরের অফিস কক্ষে চার বোতল অবৈধ টাকিলা মদ পাওয়া যায়। মদ পাওয়ার পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মাদকদ্রব্য অধিদফতরে পাঠানো হয়। লাইসেন্স ব্যতীত বিদেশি মদ নিজের দখলে রাখায় তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করি। ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) টেবিল এর ২৪ (ক) ধারায় এ মামলাটি দায়ের করি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, অবৈধ বিদেশি মদ রাখার অপরাধে কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তার তদন্ত শেষের দিকে। শিগগিরই কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৪ জুন তেজগাঁও থানায় একটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারাসহ পেনাল কোডের ৪২০/৪০৬/১০৯ ধারায় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন শফিক তুহিন। মামলার পর ৬ জুন আসিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১১ জুন ঢাকা মহানগর হাকিম কেশব রায় চৌধুরী ১০ হাজার টাকা মুচলেখায় জামিন মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি জামিনে। মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রয়েছে।
এ মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ জুন আনুমানিক রাত ৯টার দিকে চ্যানেল ২৪-এর সার্চলাইট নামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে মামলার বাদী শফিক তুহিন জানতে পারেন যে, আসিফ আকবর অনুমতি ছাড়াই তার সংগীতকর্মসহ অন্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেছেন।
পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, আসিফ আকবর আর্ব এন্টারটেইনমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে অন মোবাইল প্রাইভেট লিমিটেড কনটেন্ট প্রোভাইডার, নেক্সনেট লিমিটেড গাক মিডিয়া বাংলাদেশ লিমিটেড ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানগুলো ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে ট্রু-টিউন, ওয়াপ-২, রিংটোন, পিআরবিটি, ফুলট্রেক, ওয়াল পেপার, অ্যানিমেশন, থ্রি-জি কন্টেন্ট ইত্যাদি হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যবহার করে অসাধুভাবে ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন।
এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ২০১৮ সালের ২ জুন রাত ২টা ২২ মিনিটে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অনুমোদন ছাড়া গান বিক্রির এ ঘটনা উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। তার ওই পোস্টের নিচে আসিফ আকবর নিজের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অশালীন মন্তব্য ও হুমকি দেন।
‘পরদিন রাত ৯টা ৫৯ মিনিটে আসিফ আকবর তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন। ৫৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড লাইভ ভিডিওর ২২ মিনিট থেকে তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দেন।’
ভিডিওতে আসিফ আকবর তাকে (শফিক তুহিন) শায়েস্তা করবেন- এ কথা বলার পাশাপাশি ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তাকে যেখানেই পাবেন, সেখানেই প্রতিহত করবেন।’ এ নির্দেশনা পেয়ে আসিফ আকবরের ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেন। আসিফ আকবরের এ বক্তব্য লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। তিনি উসকানি দিয়েছেন। এতে তার (শফিক তুহিন) মানহানি হয়েছে।
বিষয়টি সংগীতাঙ্গনের সুপরিচিত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার প্রীতম আহমেদসহ অনেকেই জানেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন শফিক তুহিন।