আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ৮:২২

অবশেষে খুলে দেয়া হলো আকিজের বন্ধ দুই বিড়ি কারখানা

শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সংঘর্ষের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদ ও ফিলিপনগরে অবস্থিত আকিজের দুই বিড়ি কারাখানা অবশেষে খুলে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে টানা ১৭দিন পর মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) কারাখানা দুটি খুলে দেয়া হয়। এর আগে স্থানীয় প্রশাসন মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করলেও তাতে কোনো ফল হয়নি। শ্রমিকরা বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ায় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে হস্তক্ষেপ করায় এই বন্ধ কারাখানা দুটি খুলে দেয়া হয়।

জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদে অবস্থিত আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আকিজ বিড়ি কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক সময় মতো কারাখানায় উপস্থিত হতে না পারায় তাদের আটকে দেয়া হয়। ওই শ্রমিকরা নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর কারখানার ভেতরে ঢুকতে যান। এ সময় কারখানার নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কারখানা কর্তৃপক্ষ দৌলতপুর থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এ সময় শ্রমিক-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

একপর্যায়ে পুলিশ আরো মারমুখী হয়ে ওঠে। শ্রমিকদের ওপর শুরু করে বেপরোয়া লাঠিচার্জ। এতেও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নিবৃত না হওয়ায় পরে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় শিপুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫ জন আহত হন। এ সময় পুলিশের গুলির মুখে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে হোসেনাবাদ বাজার সংলগ্ন কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। ওইদিন দুপুর পর্যন্ত উপজেলার প্রধান এই সড়কটি টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখা হয়। হোসেনাবাদের শ্রমিকদের এই আন্দোলনে তাদের সঙ্গে উপজেলার ফিলিপনগরে অবস্থিত আকিজের আরেকটি বিড়ি কারখানার শ্রমিকরাও যোগ দেন। দুই কারাখানার শ্রমিকরা একাট্টা হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

এ ঘটনার পর বিড়ি কারখানা দুটি বন্ধ ঘোষণা করেন আকিজের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কারাখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন। এরপর শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া ও কারাখানা খোলার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেও সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি। এমন এক সংকটময় পরিস্থিতিতে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন যাপনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কারাখানা খোলার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন। সংসদ সদস্যের সরাসরি হস্তক্ষেপে টানা ১৭দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার কারাখানা দুটি খুলে দেয়া হলে শ্রমিকরা পুনরায় কাজে যোগ দেন।

দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) শাহাদাৎ হোসেন বলেন, দুুই সপ্তাহেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আজকে (মঙ্গলবার) পুনরায় কারাখানা দুটি খুলে দেয়া হয়েছে। এমপি স্যারের হস্তক্ষেপে মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে কারাখানা চালুর পর শ্রমিকরা নিজেদের কাজে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের বিবাদমান পরিস্থিতি নিরসন হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদে আকিজের এই বিড়ি কারাখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা নতুন নয়। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দাওয়া উপেক্ষা করায় প্রায়ই সেখানে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। দাবি আদায়ের লক্ষে শ্রমিকরা কাজ ফেলে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে এসেছেন বহুবার। সেখানে সবচেয়ে বড় শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দেয় ২০১২ সালের ১৫ জুলাই। সেইদিন আকিজ বিড়ির এই কারাখানায় ব্যাপকভাবে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। সে সময় কারখানার নিরাপত্তাকর্মীরা শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালান। তাদের গুলিতে মিন্টু (২২) ও রাকিবুল (২৫) নামে দুই শ্রমিক নিহত হন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের আন্দোলনের মুখে বেশ কিছুদিন কারাখানাটি অচল হয়ে পড়ে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে পুনরায় কারখানা চালু হয়।

আরো সংবাদ