ভেনটিলেশনের জন্য মনিটর ও ইনফিউশন পাম্প সংকটের কারণে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ চালু করা যাচ্ছে না। বারবার এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সুফল মেলেনি। বর্তমান করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ফের আলোচনায় এসেছে আইসিইউ চালুর বিষয়টি। এমন অবস্থায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ চালু করতে উদ্যোগ নিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। জেলায় সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি ও ব্যক্তি উদ্যোগ সমন্বয় করে হাসপাতালে আইসিইউ চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শনিবার দুপুরে যশোর সার্কিট হাউজে ‘জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি’র জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
সভায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, হাসপাতালে মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড খালি করে আইসিইউ ইউনিটের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয়। এরপর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের এ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক ও ১১ জন ট্রেনিংপ্রাপ্ত সেবিকা ওই ইউনিটের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। পরে এই ইউনিটের জন্য ১০টি বেড বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বর্তমানে ৬টি ভেন্টিলেটরের মধ্যে তিনটি নষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশিষ্ট তিনটি ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কিছু উপকরণ ও মেশিনের জন্য এখনো এই ইউনিট চালু করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের ৩ এপ্রিল হাসপাতালের আইসিইউ চালু করার জন্য ২২টি উপকরণ ও মেশিন চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। তার মধ্যে মনিটর ও ইনফিউশন পাম্প এই দুটি সরঞ্জাম পেলে ৬টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৩টি চালু করা সম্ভব। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কথার প্রেক্ষিতে সভায় করোনার এই মহামারির মধ্যে ১ বছরের বেশি সময়ের মধ্যেও যশোরের মতো হাসপাতালে আইসিইউ না থাকাটা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। সভায় তিনি সরকারি ব্যবস্থাপনায় দিকে না তাকিয়ে যশোরের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যশোরে আইসিইউ চালু করার মতামত প্রদান করেন। সভায় আলোচনার প্রেক্ষিতে সরঞ্জাম ক্রয়ে এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গনি খান পলাশ, শহিদুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী নেতারা আর্থিক সহায়তা করার আশ^াস দেন।
এছাড়া করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে করোনা কমিটি। ব্যবসায়ী নেতারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে দোকান খুললেও তারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে বা মানাতে প্রশাসনকে কোন সাহায্য করছে না বলে দাবি করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। তাই যশোরের বাজারগুলোতে সংক্রমণ ও জনসমাগম কমাতে যশোরের কাঁচাবাজারগুলো সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বড়বাজারের সবজি বিক্রির স্থান কালিবাড়ি থেকে খালধার রোড অভিমুখে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর সবজি বাজার ফাঁকা হওয়ার পরে সেখানে মাছবাজার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার যশোরের উপ পরিচালক হুসাইন শওকত, যশোর পৌরসভায় মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার, মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন, যশোর পৌর সভার সচিব আজমল হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান প্রমুখ।