আবারো ডুবলো যশোর শহর। ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ডুবে যায় শহরের অধিকাংশ এলাকা। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। দীর্ঘদিন ধরে অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার যন্ত্রণায় আছে শহরবাসী। তারা ক্ষোভের সাথে বলে আমাদের আর কতদিন এ যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে?
শুক্রবার যশোরে একটানা তিন ঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে শহর ও শহর তলির নিম্নাঞ্চল ডুবে গিয়ে ঘরবাড়িতে পানি উঠে যায়। পৌরবাসির অভিযোগ পৌরসভার ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিস্কার না করায় ময়লায় ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বিমান বন্দর সংলগ্ন আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার তিন ঘন্টায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বজ্রপাতসহ গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কিছুক্ষণ চলা এই বৃষ্টিপাত ভারী বৃষ্টিপাতে রূপ নেয়। থেমে থেমে বজ্রপাতের সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তবে পুরোপুরি বৃষ্টি বন্ধ হতে দেখা যায় বিকাল চারটার দিকে। এদিকে তুমুল বৃষ্টিতে শহরের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ রাস্তায় পানি জমে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। জমে থাকা পানিতে বাসিন্দাদেরও কষ্টের সীমা নেই।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি হলে শহরের বিভিন্ন অঞ্চল অন্যবার তলিয়ে গেলেও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ঘোপ এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়নি। কিন্তু এবার বৃষ্টিতে ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে কবর স্থানের আশপাশের রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার মধ্যে পথচারীদের চলাচল করতে হয়েছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় শহরের রেল রোড, মাইকপট্টি, পাইপপট্টি, ষষ্টিতলায় ফায়ার সার্ভিসের সামনের রোড, বেজপাড়া জমাদ্দারপাড়া, কবর স্থান রোড, আনসার ক্যাম্প, শংকরপুর, কারবালা, ডিসি বাংলো রোড, বারান্দীপাড়া, খড়কি, স্টেডিয়ামপাড়া, পালবাড়িসহ অধিকাংশ এলাকা।
ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা সাকিলা আফরোজ জানান, এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের উদ্যোগে কোন দিনই ড্রেন পরিষ্কার করানো হয়নি। ময়লায় ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়। এর আগে এমন জলাবদ্ধতা হয়নি। এবারই প্রথম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বেজপাড়া জমাদ্দারপাড়া, কবরস্থান রোড, আনসার ক্যাম্প, শংকরপুর এলাকায়। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা খারাপ। আর দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় মাটিতে ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তিন থেকে চারদিন ধরে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। একথা জানান ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোকন শেখ, মোহাম্মদ সেলি, মিজানুর রহমানসহ আরো অনেকেই। বৃষ্টি থেমে গেলে অনেক অঞ্চলে পানি নেমে যায়।
শহরের খড়কী শাহ আবদুল করিম সড়কের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের এই এলাকার বাড়িঘরে হাঁটু পানি জমে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। এই অঞ্চলের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘদিন ধরে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানালেও কোনো কাজ হয়নি। তিনি বলেন, আমরা বর্তমান পৌর প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কষ্টের দিকে নজর দেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মেনে নিলেও পৌর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানান শহরের বেজপাড়া চোপদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান ভিটু। তিনি বলেন, সাবেক মেয়রদের দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে ভেঙ্গে পড়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। অবিলম্বে পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে পানি অপসারণসহ এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
যশোর পৌরসভার পানি নিষ্কাশন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী এসএম কামাল বলেন, জলাবদ্ধতার অনেকাংশ হ্রাস পেয়েছে। আমরা ড্রেনের পানি নিষ্কাশনে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো অপসারণ করছি। বর্তমানে পৌর প্রশাসকের উপস্থিতিতে চাঁচড়া এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে পানি বের হওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কাজ চলছে।
অপরদিকে, ভারি বর্ষণে তলিয়ে গ্রামঞ্চলের নিম্নাঞ্চলও। ভেসে গেছে মাছের ঘের, পুকুর জলাশয়। মাঠের পর মাঠ ফসল পানির নিচে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি চাষিরা। বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধির শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, ‘গেল কয়েক মাস ধরে যশোরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে; এতে সবজি চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আগাম শীতকালীন সবজি রোপন চলমান, সেই ক্ষেতগুলো এই বৃষ্টিতে পানির নিচে। বারবার চাষিদের রোপণ করা সবজির গাছ নষ্ট হওয়াতে সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাজারে সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। তার পরেও চাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে ; জমিতে বাধা পানি দ্রুত সরানোর।