তাফসিরুল কোরআন মাহফিলকে ঘিরে যশোরে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) মানুষের ঢল নামে। এদিন সকাল থেকেই চারপাশ থেকে মানুষ স্রোতের মতো আসতে থাকে যশোর শহরতলীর পুলেরহাটে মাহফিলস্থলে।
দুপুরের মধ্যেই ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রবেশের জন্যে তৈরি চারটি গেট। মুসল্লিরা অবস্থান নেন আশপাশের এলাকাগুলোতে।
সন্ধ্যা পার হয়ে গেলেও মানুষের স্রোত থামেনি। বরং আরও বাড়তে থাকে। যার প্রভাবে জেলা শহরের দক্ষিণাঞ্চলের পুরো অংশ মানুষের মেলায় পরিণত হয়। পাড়া-মহল্লাগুলোতে সাদা কাপড় টাঙিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করতে দেখা যায়। আয়োজকদের ধারণা ১৫ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি ঘটেছে এই মাহফিলে। মানুষের ভিড়ে মাহফিলে ধাক্কাধাক্কিতে ৩০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে দশজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, অধিকাংশের বুক এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে।
দেশের ছয়জন স্কলারদের উপস্থিতিতে পুলেরহাটে তিনদিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিল শুরু হয় গত বুধবার (১ জানুয়ারি)। আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন এই মাহফিলের আয়োজন করে। প্রথম দুদিন আলোচনা করেন আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, আল্লামা মামুনুল হক, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হামজা।
শুক্রবার প্রথমে আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। শেষ বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী আলোচনা শুরু করেন রাত ৯টার দিকে। মূলত ড. আজহারীর আলোচনা শোনার জন্যেই মানুষের মধ্যে এত আগ্রহ দেখা গেছে।
প্রথম দুদিন মাহফিলে মুসল্লিদের স্বাভাবিক উপস্থিতি থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকেই মানুষের যেন স্রোত নামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও মাহফিলে উপস্থিত হয়েছেন ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, খুলনা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুরের মানুষ।
প্রতিটি স্থান থেকেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাহফিল শুনতে আসেন।
যশোরের সাধারণ মানুষরা বলেছেন, কোনো আয়োজনে এত মানুষের উপস্থিতি অতীতে আর কখনও দেখা যায়নি এই জেলায়। আয়োজকদের ধারণা মাহফিল শুনতে ১৫ লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতি ঘটেছে। তবে, জেলাবাসীর ধারণা এই সংখ্যা আরও বেশি।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাহফিল চত্বরে প্রবেশদ্বারে হঠাৎ ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এতে ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে দশজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তিদের মধ্যে নয়জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- মইনুল ইসলাম (৩২), ওসমান গণী (১৮), জিয়ান (২১), মারজান (১৮), ইব্রাহীম (৪০), মাসুদ (২৬), সাইদুল (২৮), লাবলী (৩০) ও আফিফা (১৪)।
আহতরা জানান, তারা শুক্রবার সকালে পুলেটহাটে মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজে এসেছিলেন। মেইন গেট তালাবদ্ধ থাকায় তারা সবাই গেটের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ সেখানে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকারা সামনে এগোতে চেষ্টা করলে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় পেছন থেকে ধাক্কায় সমানে দাঁড়িয়ে থাকারা মাটিতে পড়ে পদদলিত হন। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার জুবাইদা ইসলাম বলেন, আহতরা সবাই পদদলিত হয়ে আহত হয়েছেন। আহতদের মহিলা ও পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আফিফা নামে একজনের অবস্থার গুরুতর। অন্যরা আশঙ্কামুক্ত।