সারা দেশের আদালতে আইনজীবী, বিচারক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কুমিল্লার ঘটনায় যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাও জানাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
কুমিল্লার আদালতের এজলাসে এক আসামির ছুরিকাঘাতে অপর আসামি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচারকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত চেয়ে করা এক রিট আবেদনের শুনানিতে বুধবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ইশরাত জাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আদালত বলেন, কুমিল্লার পর মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট বারেও ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় কোর্টে আইনজীবী, জাজ ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য কী পদক্ষেপ নিলেন।
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, কুমিল্লা এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের দুটি ঘটনাই ব্যক্তিগত।
এ সময় আদালত বলেন, ব্যক্তিগত হোক, যাই হোক। কোর্টের ভেতরে ছুরি নিয়ে কীভাবে যায়? পুলিশ কী করে? ডেফিনেটলি এটা পুলিশের নেগলিজেন্স।
তখন আবেদনকারী আইনজীবী বলেন, নিরাপত্তা তো সবার জন্য। উনিও (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। তাই আইনজীবী, বিচারকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এরপর আদালত ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে সারা দেশের আদালতে আইনজীবী, বিচারক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা এবং কুমিল্লার ঘটনায় যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলো তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন। সে পর্যন্ত রিট আবেদনটি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখেন।
রিট আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাব মহা পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৫ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফাতেমা ফেরদৌসের আদালতে মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামে ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট সংঘটিত আবদুল করিম হত্যা মামলায় (মামলা নং-১৩) আসামি আবুল হাসান (২৫) ও ফারুক হোসেন (২৭) হাজিরা দিতে আসেন।
আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ওই হত্যা মামলার আসামি আবুল হাসান হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে তার সহযোগী আসামি ফারুক হোসেনকে ছুরিকাঘাত করেন। ফারুক দৌড়ে বিচারকের খাস কামরায় গিয়ে আশ্রয় নিলেও হাসান ওই কামরায় গিয়ে ফারুককে আবারও উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করেন। এতে ফারুক মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় আদালতের পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা হাসানকে ধরে ফেলেন।
গুরুতর আহত ফারুককে প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফারুক মনোহরগঞ্জের অহিদ উল্লাহর ছেলে এবং হাসান লাকসাম উপজেলার ভোজপুর গ্রামের শহীদুল্লাহর ছেলে। দু’জন সম্পর্কে আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই।
এ ঘটনায় সারাদেশের বিচারকদের নিরাপত্তা চেয়ে রিট করেন এক বিচারকের স্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।