আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৮:২১

আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা আজ! চীন সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন।

আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ হচ্ছে শনিবার সকাল ১০টায়। প্রথম তালিকা প্রকাশের পর এক বছরেরও বেশি সময় নিয়ে অনলাইনে প্রকাশিত হতে যাওয়া চূড়ান্ত তালিকার আগে আসাম রাজ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে ১০ হাজার আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ। ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, শনিবার সকাল ১০টায় অনলাইনে প্রকাশিত হতে চলেছে আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা। প্রথম তালিকা প্রকাশের পর এক বছরেরও বেশি সময় নিয়ে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে চূড়ান্ত তালিকা। যাতে কোনো অ-ভারতীয় এ তালিকাভুক্ত হতে না পারে সেজন্য এ সময় নেয়া। তবে এ তালিকার বাইরে রয়েছেন ৪১ লাখের বেশি মানুষ। যাদের অধিকাংশই মুসলিম। ভবিষ্যতে আসামের মুসলমানদের ভাগ্যে কী হবে- এ নিয়ে চরম উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠায় তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত চার বছর ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর আসাম সরকার চূড়ান্ত এ নাগরিক তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। তালিকা থেকে বাদ পড়ে রাজ্যের লাখো বাসিন্দা বিশেষ করে মুলসমানদের নাগরিকত্ব হারিয়ে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যাদের অধিকাংশই এসেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে, এমনটি দাবি করেছে ভারত সরকার। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করে আলাদা দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামীকাল শনিবার এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে মোদি সরকার। আসামের মোট জনসংখ্যা তিন কোটি। সেখানে যদি অন্তত ২০ লাখ মানুষও নাগরিকত্ব হারায় পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে- প্রশ্ন রাখেন তিনি। ‘কাশ্মীরের মতো আসামেও হাহাকার ছড়িয়ে পড়বে’ এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ গবেষক। তবে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালের শুক্রবার চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সত্যিকারার্থে যারা ভারতীয় নাগরিক, তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদি তাদের নাম নাও আসে, সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য-সহায়তা দেয়া হবে। নাগরিকত্ব প্রমাণে তাদের আইনি সহায়তাও দেয়া হবে। তিনি বলেন, এআরসি’র চূড়ান্ত তালিকায় যাদের নাম আসবে না, তার মানে এই নয় যে, তারা বিদেশি। তাদের জন্য সব ধরনের আইনি সহায়তা দেয়া হবে। ‘কারও চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই, আতঙ্কিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। সকলের দেখভালের দায়িত্বে আছে এখানকার সরকার। এমনকি চূড়ান্ত তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়বে তারাও ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাবেন। ভারতের ‘প্রেস ট্রাস্ট’-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে, আসাম সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার সকাল ১০টা থেকে অনলাইনে এ তালিকা দেখা যাবে। যাদের ইন্টারনেট সংযোগ নেই তারা রাজ্য সরকারের সেবা কেন্দ্রে গিয়ে এ তালিকা দেখতে পারবেন। প্রসঙ্গত, নাগরিক বিল প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫১ সালে। কংগ্রেসের আমলে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বেআইনিভাবে ভারতের আসামে এসে বসবাস করছেন তাদের চিহ্নিত করতেই সেই তালিকা সংশোধনের নতুন নির্দেশ দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সময় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য দু-দিন আগে থেকেই এ রাজ্যে ১০ হাজার বাড়তি আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো জায়গায় একসঙ্গে চারজন মানুষ অবস্থান করতে পারবেন না বলেও সতকর্তা জারি করা হয়েছে। কারণ, এর আগে এনআরসি নিয়ে গুয়াহাটির বহু অঞ্চলে হিংসার বলি হন অসংখ্য মানুষ। বিক্ষোভের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনজীবন। আসাম প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক টুইটার বার্তায় সমস্ত অধিবাসীর কাছে ‘এনআরসি নিয়ে কোনো গুজব না ছড়ানোর’ আবেদন জানানো হয়েছে। টুইটার বার্তায় বলা হয়, ‘গুজবে কেউ কান দেবেন না। কারণ এতে ক্ষতি হবে রাজ্য ও রাজ্যবাসীর’। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে যে, তালিকায় নাম না থাকা মানেই যে তারা বিদেশি, সেটা নয়। যেসব অধিবাসীর নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে তারা ট্রাইব্যুনালে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ পাবেন। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, এ সময়সীমা বাড়িয়ে ৬০ দিন থেকে ১২০ দিন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এক হাজার ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একশ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ ওই সংখ্যা দুইশোর বেশি হবে। সেখানে নাম নথিভুক্ত না হলে সেই ব্যক্তি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই তালিকাভুক্ত না হওয়া ব্যক্তিকে শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হবে না। এদিকে এনআরসি তালিকা থেকে বৃহৎ সংখ্যক হিন্দু নাগরিকের নাম বাদ পড়ার ঘটনায় সরব হয়েছেন আসামের বিজেপি নেতারা। এ নিয়ে গত সপ্তাহে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে। এরপরই তিনি জানান, প্রয়োজনে তালিকা পুনঃসংশোধিত করা হবে। যেসব বহিরাগতের নাম তালিকায় উঠেছে, প্রয়োজনে তাদের সরিয়ে প্রকৃত হিন্দু আসামবাসীর নাম তোলা হবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সারা আসাম বাঙালি ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মুখোপাধ্যায়। তার কথায়, ‘আমরা খসড়ায় যা দেখেছি তা কার্যকর হলে বাঙালি হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর জন্য দায়ী থাকবে সরকার।’ ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম আশঙ্কা প্রকাশ করছে যে, শনিবারের চূড়ান্ত তালিকায় ৪১ লাখের বেশি আবেদনকারীর নাম বাদ পড়তে পারে। যাদের অধিকাংশই মুসলিম ও বাংলাদেশি। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। ভারত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এমন আভাস এর আগেও দেয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের বলেন, আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে যা হচ্ছে সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গত বছর খসড়া নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, নাগরিক তালিকা নিয়ে আসাম সরকার ‘সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা’ দিয়েছে এবং এ তালিকা নিয়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো ‘প্রভাব পড়বে না’। প্রতিবেশী বাংলাদেশে থেকে বহু মানুষ অবৈধভাবে আসামে বসবাস করছে দাবি তুলে কয়েক দশক আগে আসামে ‘বাঙ্গালি খেদাও’ আন্দোলন শুরু হয়। অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে চার বছর আগে আসাম সরকার নতুন নাগরিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে। নগরিক তালিকায় ঠাঁই পেতে হলে বাসিন্দাদের প্রমাণ করতে হবে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে রাজ্যে আবাস গেড়েছেন। গত চার বছর ধরে সেখানকার বাসিন্দাদের নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের নানা কাগজ-পত্র হাতে এক দরজা থেকে অন্য দরজায় ছুটতে হয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রথম খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়। সেখানে মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের ঠাঁই হয়। অথচ আবেদন করেছিল তিন কোটি ২৯ লাখ মানুষ। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও বিক্ষোভ শুরু হলে ওই বছর জুলাই মাসে সংশোধিত খসড়া নাগরিক তালিকা প্রকাশ পায়। নতুন তালিকায় দুই কোটি ৮৯ লাখ মানুষের নাম ঠাঁই পেলেও বাদ পড়েন উত্তর-পূর্ব আসামের প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসামের পর পশ্চিমবঙ্গসহ সীমান্তবর্তী অন্যান্য রাজ্যের ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ চিহ্নিত করতে একই ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন বলে জানায় রয়টার্স।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত