যশোরের বিভিন্ন এলাকায় ইজিবাইক, রিকসা ও ভ্যান চুরি এবং বিকিকিনির ঘটনায় সংঘবদ্ধ রবিউল সিন্ডিকেট জড়িত। সংঘবদ্ধ ওই চোর সিন্ডিকেটের অব্যাহত চুরিতে দিশেহারা মানুষের অব্যাহত অভিযোগে বিভিন্ন সময় পরিচালিত পুলিশি অভিযানে আটক হয়েছে সিন্ডিকেট প্রধান শহরতলী ডাকাতিয়ার রবিউল ইসলাম। রবিউল সিন্ডিকেটের ডাকাতিয়া নুরপুরের কয়েকটি ডেরা, তার বাড়ি ও যশোরের শহরতলীর তার আরো কয়েকটি ডেরায় অভিযান চালিয়ে রিকসা, ভ্যান, ইজিবাইক, ব্যাটারি ও অনেক যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়েছে।
এর আগে পুুুলিশের হাতে ৫ বার আটক হয়ে চালান হলেও তার টনক নড়েনি। জামিন পেয়ে মুচলেকা দিলেও নেমে পড়ে সেই চোরাই কর্মকান্ডে। ফের একাধিক চুরির ঘটনায় ৭ নভেম্বর গভীর রাতে মোস্টওয়ান্টেড এই রবিউল ইসলাম গাজীকে আটক করেছে পুলিশ। ৮ নভেম্বর তাকে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তার সিন্ডেকেটের আরো সদস্য আটক ও চোরাই মালামাল উদ্ধারে অভিযান চলছিল।
থানা, ডিবিসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, গত দুই বছরে যশোর সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্পটে রিকসা ভ্যান ইজিবাইক, নসিমন করিমন মিলিয়ে দেড় শতাধিক চুরি সংঘটিত হয়। এর মধ্যে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে বিভিন্ন থানায়। ডজন খানেক চুরি সংঘটিত হয় যশোর সদরের কাশিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। ৮ নম্বর ওয়ার্ড ডাকাতিয়া গ্রামের আব্দুল মালেক পালোয়ানের বাড়িতে চুরি হয়, ডাকাতিয়ার সৈনিক বেলাল হোসেনের বাড়ি চুরি হয়। একই গ্রামের সংবাদকর্মী মোজাম্মেল হোসেন সোহাগের বাড়িতে চুরি হয়। একই গ্রামের নুর আলীর বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে চুরি হয়। চোরেরা নিয়ে যায় এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন। এছাড়া একই গ্রামের এক বিধবা নারীর বাড়িতে গ্রিল কেটে দুই লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। এছাড়া ডাকাতিয়া দক্ষিণপাড়া কাঁঠালতলা জামে মসজিদের মোটর দুটি চুরি হয়। নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের একটি বাড়ি থেকে ৫টি গরু নিয়ে যায় চোরেরা। ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপদ্দি ঘোড়াগাছা গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে গরু গুলো চুরি যায়। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান উদ্দিন যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেন। এরপর রিকসা ভ্যান চুরির হিড়িক পড়ে যায়। যশোরের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটলে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন এটি সংঘবদ্ধ রবিউল অপরাধী চক্রের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে থানায় কয়েকটি অভিযোগও জমা পড়ে।
এ ঘটনায় চোর রবিউল সিন্ডিকেটের দিকে নজরদারি শুরু হয়। বছর খানেক আগে সিন্ডিকেটের ডাকাতিয়ার ডেরা ও রবিউলের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। রাত দুটো থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে অভিযান। এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে পরিচালিত অভিযানে এসআই ফজলুর রহমান রিকসা ভ্যান, ইজিবাইক ব্যাটারি, যন্ত্রাংশ মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার চোরাই মাল উদ্ধার করেন রবিউলের ডেরা থেকে। ওই সময় একদফা ও এর আগে আরো ৪ দফা পুলিশের হাতে আটক হয় চোর রবিউল।
স্থানীয়রা, থানা ও ডিবি সূত্র জানিয়েছে, যশোরের এখন সংঘবদ্ধ চোরাই মাল বিক্রি সিন্ডিকেটের প্রধান রবিউল ইসলাম ও তার ভাই বিল্লাল চক্র। রবিউল অধিকাংশ চুরির সাথেই এই সিন্ডিকেট জড়িত। এর আগেও কয়েক দফা এই চোর রবিউল জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির হাতে চোরাই মালামালসহ আটক হয়। চোরাই ভ্যান, মোটর সাইকেল, ইজিবাইক চুরি ও বিকিকিনিই এই রবিউল চক্রের ব্যবসা। আগাম টাকা দিয়ে চোরদের চুরি করতে বলে। রাতের আঁধারে ওই ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও চুরি করা মালামাল অন্য জেলায় পাঠিয়ে দেয়। যন্ত্রপাতি খুলে একটি মালামাল অন্যটিতে লাগিয়ে আমূল পরিবর্তন আনে রিক্সা-ভ্যান ইজিবাইকে। অনেক সময় যাত্রী সেজে চালককে কিছু কিনতে পাঠায়। আর দোকানে গেলে চুরি করে সটকে পড়ে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চুরি করে এই সিন্ডিকেট। বাঘারপাড়ার চুরির ঘটনার অভিযোগে ৭ নভেম্বর রাতে তাকে আটক করেছে বাঘারপাড়া থানা পুলিশ। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৮ নভেম্বর আদালতে চালান দিয়েছে পুলিশ। ৮ নভেম্বর বাঘারপাড়া থানার মামলা নাম্বার ৩।
বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে এসআই সালাউদ্দিন, এসআই অনিমেষ এই আটক ও উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন।
এসআই সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, চোর রবিউল ইসলাম গাজীকে নুরপুর এলাকায় আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যে মণিরামপুরের রাজগঞ্জ এলাকা থেকে কয়েকটি চোরাই ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। আসামির সহযোগীদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।