স্টাফ রিপোর্টার।। যশোরের আলোচিত ইমরোজ হোসেন হত্যা মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই শামিম হোসেন যশোর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন। একই সাথে ছয়জনকে এই মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলো, সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের দাড়িপাড়ার মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সেলিম রেজা পান্নু, চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার মৃত তৌহিদুল ইসলামের ছেলে আকিবুর রহমান, বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার আনুর বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুর রহমানের ছেলে মোস্তফা ওরফে মোস্ত, বাহাদুরপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে আলী হোসেন, শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকার আজিজুল হকের ছেলে খাইরুল ইসলাম রিংকু, চাঁচড়া মধ্যপাড়ার মৃত মিজানুর রহমান ভগোর ছেলে আতিকুর রহমান স্বাধীন, ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার শাহজাহানের ছেলে আব্দুর রহিম বিশ্বাস, চাঁচড়া গোলদারপাড়ার মোশারফ হোসেন খোকনের ছেলে শাহিন রেজা, হঠাৎপাড়ার বাবর আলীর ছেলে রনি শেখ, ভাতুড়িয়া-নারায়ণপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার এনামুল সরদারের ছেলে নাজমুল হোসেন, ভাতুড়িয়া মর্ধপাড়ার সেলিম হোসেন রাজা মিয়ার ছেলে তানভীর হোসেন, ঝাউদিয়া গ্রামের হাফিজুর রহমান হাফিজের ছেলে সজল, কিসমত নওয়াপাড়ার জামসেদ ওরফে মকটুর ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিকী অভি এবং তদন্তে প্রকাশিত কিশোর অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে ভাতুড়িয়া হাফেজপাড়ার মাহবুব আলমের ছেলে হাসান মাহমুদ।
এই মামলার অব্যাহতির আবেদনে থাকা চারজন হলো, ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার গ্রামের দাড়িপাড়ার ইয়াসিন বিশ্বাসের ছেলে আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাগর, ভাতুড়িয়া হাফেজপাড়ার রশিদ ওরফে খোকন ডাক্তারের ছেলে ইমদাদুল হক মিলন, যশোর শহরের ষষ্ঠীতলার নূর ইসলামের ছেলে আলমগীর হোসেন, চাঁচড়া ডালমিল ছোবেদ আলীর ছেলে রাসেল ওয়াসিক, মণিরামপুর উপজেলার পলাশী পূর্বপাড়ার আকবার আলীর ছেলে হৃদয় হাসান, আজগর আলী গাজীর ছেলে আশিকুর রহমান।
হত্যা মামলা সূত্রে জানা গেছে, ভাতুড়িয়া বিল হরিণায় বাদী নূর ইসলাম নূরুর ১০ বিঘা জমির উপর একটি মাছের ঘের ও গরুর খামার রয়েছে। বড় ছেলে ইমরোজ হোসেন ওই খামার দেখভাল করেন। ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মণিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের এক তরুণ-তরুণী একটি প্রাইভেটকারে বেড়াতে আসেন। সেসময় নুর ইসলামের ছোট ছেলে ইসরাজুল ইসলাম তাদের কাছে জানতে চান কি কারণে এখানে এসেছে। তারা জানায়, তারা স্বামী-স্ত্রী এখানে বেড়াতে এসেছে। এ নিয়ে ইসরাজুলের সাথে তাদের দুইজনের কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায় তাদের দুইজনকে ঘেরের মধ্যে আটক করে রাখে। এরপর আটক থাকা তরুণ মোবাইল করে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে ডেকে আনে। আবার ইসরাজুল ও মোবাইল করে তার ভাই ইমরোজকে ডেকে আনেন। কিন্তু ওই তরুণের ফোনে আসা সন্ত্রাসীরা এসেই ইমরোজকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। ইমরোজ মাটিতে পড়ে গেলে সন্ত্রাসী ইমরোজকে গুলি করে। ইমরোজকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল পৌনে তিনটার দিকে মারা যান।
এই ঘটনায় নিহতের পিতা নূরুল ইসলাম নূরু বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। প্রথমে থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সমীর কুমার সরকার এবং পরে ডিবি পুলিশের এসআই শামিম হোসেন মামলাটি তদন্ত করেন।
এদিকে ঘটনার দিন পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইমরোজকে হত্যার হুকুম দাতা ও সেল্টারদাতা সেলিম রেজা পান্নুর বাড়িতে ও চাঁচড়া মোড়ের ব্যবসায়ীক অফিস তল্লাশি করে পুলিশ একটি সর্টগান, ৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি এবং ৭৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি এই মামলার রাজু আহম্মেদ, সেলিম হোসেন রাজা, শরিফুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ও আনিসকে ঘটনার সময়ই পুলিশ আটক করে।