আজ - বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - দুপুর ১:৫৬

একটা হাসপাতাল করব, যেখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা হবে মুশফিকুর রহিম

মুশফিকুর রহিমকে ছুটির দিনেও মাঠে দেখা যায়। ফিটনেস অনুশীলন করছেন, নয়তো ব্যাটিং। করোনাকালেও তিনি থেমে নেই। ঘরে ট্রেডমিলে দৌড়েছেন, কখনো নেমে এসেছেন বাসার সামনের রাস্তায়, কখনো একাকী চলে গেছেন দূরের নির্জন মাঠে। মহামারির এই সময়ে বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান যুক্ত হয়েছেন নানা জনহিতকর কাজেও। প্রথম আলোকে দেওয়া তাঁর একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে খেলার বাইরের অন্য এক মুশফিকুর রহিমের ছবি।

করোনাভাইরাস আগামী কয়েক বছরেও যাবে কি না সন্দেহ। তাই বলে জীবন-জীবিকা তো থেমে থাকবে না। আমি খেলোয়াড় বলে নই; চাকরিজীবী বলেন, ব্যবসায়ী বলেন, রিকশাচালক বলেন—সবার ক্ষেত্রেই একই কথা। সারা বিশ্বে যে করোনা পরিস্থিতি, তাতে লকডাউন এখনো থাকা উচিত বা নিয়মকানুন আরও কঠোর হওয়া উচিত। কিন্তু এ রকম করে আর কত দিন!

আমার কথাই যদি বলি, বিসিবির বেতন ছাড়া আমার অন্য কোনো আয় নেই। আমরা যদি না খেলি, আমাদের জন্যও জীবনটা কঠিন হয়ে যায়। আমি মনে করি, যতটুকু সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করে সবারই স্বাভাবিক জীবনের কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত। তবে আগে স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিসিবিকে ধন্যবাদ দেব, প্রেসিডেন্টস কাপ টুর্নামেন্টটা আমরা খুব ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না হোক, ঘরোয়া ক্রিকেটও যদি এভাবে শুরু করা যায়, তাহলেও হয়। আমরা ২০-৩০ জন খেলোয়াড়ই তো শুধু নই, বাইরেও অনেক খেলোয়াড় আছে। তারাও জীবিকা নির্বাহ করে খেলা দিয়েই। ঘরোয়া ক্রিকেটটা শুরু হলে তাদের অনেক উপকার হবে।

সময়টা অলস বসে কাটিয়ে দিতে পারতাম। তবে আমি চিন্তা করেছি, সব যখন আবার ঠিক হয়ে যাবে, তখন তো একটার পর একটা খেলা হবে। সেটার জন্য আমি ফিটনেসের কাজটা আগে থেকেই করে রাখি। আমাদের ট্রেনাররা অনেক সাহায্য করেছেন। অডিও বা ভিডিও কলে তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে পরিকল্পনা নিয়েছি, আমার পরিকল্পনা তাঁদের জানিয়েছি।

এটাও আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল। আমি যদি দুজন মানুষকেও উৎসাহ দিতে পারি, সেটাই তৃপ্তির। আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে অনেকে আমাকে বলেছেন আমার কাজ তাঁদের ভালো লেগেছে বা আমাকে দেখে তাঁরাও চেষ্টা করেছেন কিছু কাজ করতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি, ভিডিও দেওয়ার এটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। আরও ১০-২০ জন মানুষ যেন উৎসাহী হন, আমাদের মতো না করলেও তাঁরাও যেন করোনার সময় শরীরটা ঠিক রাখতে কিছু না কিছু করেন। আমি তো মনে করি করোনাভাইরাসের সময়ে মানুষ শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি সচেতন হয়েছেন। যাঁরা সারা দিন অফিস করেন, তাঁদের অনেকে এখন ২০ মিনিট হলেও হাঁটেন বা অন্য কিছু করেন।

এ রকম আগেও করেছি। অন্য খেলোয়াড়েরাও করেছেন। আর শুধু খেলোয়াড়েরা না, অন্য অনেকেই অনেকভাবে করেছেন। তবে হ্যাঁ, করোনার সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাড়নাটা আরও বেশি এসেছে। মানুষের অসহায় অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, আমি যদি অন্তত ১০ জন মানুষকেও সাহায্য করতে পারি, সেটা যেভাবেই হোক, তাহলে মনে করব মানুষের কাজে একটু হলেও লাগতে পেরেছি। ব্যাট নিলামে তোলার চিন্তাটা করোনার কারণেই মাথায় আসে। এটা থেকে বড় একটা অঙ্কের অর্থ পেয়ে যদি মানুষকে সাহায্য করতে পারি। শহীদ আফ্রিদিকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে তিনি এই মহৎ কাজে আমাকে সাহায্য করেছেন।

আমার ইচ্ছে একটা হাসপাতাল করব, যেখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা হবে। এটাই আমার মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া ফাউন্ডেশনের অধীনে আমার জেলা বগুড়ায় একটা ক্রিকেট একাডেমি করার পরিকল্পনা আছে।

আমার অনেক আগে থেকেই চিন্তা ছিল এ রকম কিছু করার। কিন্তু এটার জন্য যে রকম সময় দরকার, সেটা পাচ্ছিলাম না। খেলা নিয়ে এত ব্যস্ততা থাকি যে দু-তিন মাস সময় পাওয়া সত্যিই কঠিন। এখানে কাগজপত্রের অনেক কাজ থাকে, অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যাপার থাকে। করোনায় খেলা না হওয়ায় সময় পেলাম এটা নিয়ে কাজ করার। এখনো কিছু কাজ চলছে। সবকিছু গোছাতে আরও সময় লাগবে।

আমার ইচ্ছে একটা হাসপাতাল করব, যেখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা হবে। এটাই আমার মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া ফাউন্ডেশনের অধীনে আমার জেলা বগুড়ায় একটা ক্রিকেট একাডেমি করার পরিকল্পনা আছে। এখন আমরা শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। বগুড়ায় কিছু দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে আমরা ৮-১০ বছর যাবৎ মাসিক বৃত্তি দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। আমরা চাইছি এটা আরও বড় পরিসরে করতে। বগুড়া থেকে আমরা যেন এটা পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারি। এ ছাড়া বন্যাদুর্গত মানুষকেও সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।

বাংলাদেশ দলে খেলার সুবাদে অনেকেই আমাদের চেনেন। আমরা কিছু করলে তাঁরা আগ্রহ নিয়ে দেখেন, জানতে চান আমরা কী করছি। তবে আমি নিশ্চিত, এ রকম অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা আমাদের আগে থেকে, এমনকি আমার জন্মের আগে থেকেও জনহিতকর কাজ করছেন। এটা অবশ্যই ভালো যে সাকিব বা মাশরাফি ভাইয়েরা এটা শুরু করেছেন, আমিও শুরু করেছি। বাইরের কেউ যদি আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে চান, তাহলে আমরা আরও শক্তিশালী হব।

শিশুদের নিয়ে ইউনিসেফ নিয়মিত যে কাজগুলো করে, সেটার সঙ্গেই আমাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। চারদিকে যে রকম শিশু নির্যাতন হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, শিশুশ্রম হচ্ছে…আমি যেন এসবের বিরুদ্ধে সমাজকে একটা বার্তা দিতে পারি।

অবশ্যই করার আছে। আমি যদি ফাউন্ডেশনটা না করতাম, তাহলে ইউনিসেফ যেভাবে বলত, আমি সেভাবেই কাজ করতাম। এখন যেহেতু আমার একটা ফাউন্ডেশন আছে, আমরা একসঙ্গে মিলে যদি কাজ করতে পারি, তাহলে আরও ভালো হবে। তাদের সঙ্গে আমার সে রকম কথাও হয়েছে। আমি এর আগে সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে, জাগো ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করেছি। আমার বিশ্বাস, ইউনিসেফের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় আমি আমার কাজগুলো আরও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিতে পারব।

প্রথমত, এটা শখ থেকেই খোলা। তবে আমার বিশ্বাস, আমার ১০-১২ জন হলেও ভক্ত আছে। বাংলাদেশে অনেক ছেলে আছে, যারা শিখতে চায় বা যারা সাকিব, রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ), মাশরাফি ভাই বা আমার কাছে আসতে পারে না বা আমাদের কথা শুনতে পারে না, তারা যদি আমার ইউটিউব চ্যানেল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কিছু শেখার, জানার একটা উপায় খুঁজে পায়; তাহলেও বড় একটা কাজ হয়। অনেক ছেলে আছে, যারা ভুল করে করে শেখে। আমার মনে হয়, ভুল করার আগে যদি তারা সঠিকটা শিখে ফেলে, তাহলে ১০ বছরে যে জায়গায় যেতে পারত, সেটা ৫ বছরেই যেতে পারবে।

আমি যে বিশ্রাম একেবারেই নিই না, তা নয়। তবে কোচ বা দলের সঙ্গে আমি যেসব কাজ করি, আমি মনে করি এর বাইরেও আমার কিছু করার আছে। নিজের শক্তির জায়গা বা দুর্বলতার জায়গা নিয়ে সব সময়ই বাড়তি কাজ করার থাকে। এটা গত পাঁচ-সাত বছরে আমি তা ভালোভাবে শিখেছি। আর একা একা কাজ করার অনেক উপকারও আছে। এটা আমাকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেয়। তবে বেশি অনুশীলন করলেই হবে না, অনুশীলনটা ভালো হতে হবে। অনেকে ভাবে, শুধু বাড়তি অনুশীলন করলেই হয়। আসলে তা নয়।

সুত্রঃ প্রথম আলো

আরো সংবাদ