দেশে গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১৭ হাজার ৯৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক ৩ হাজার ৯৪৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড।
দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১১০তম দিনে আজ গতকালের চেয়ে ৪৮৪ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৬ হাজার ৪৩৩টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৪৬২ জন। দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৬০ জন।
নমুনা পরীক্ষায় আজ শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ০৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে আজ দেশে ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ২ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৭ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৬২১ জন।
শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ মৃত্যুর হার দশমিক ০১ শতাংশ কম।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮২৯ জন। গতকালের চেয়ে আজ ২০২ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ২ হাজার ৩১ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫১ হাজার ৪৯৫ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৮৬টি। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ২৪৫টি নমুনা। গতকালের চেয়ে আজ ৩৪১টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৬৬টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে সর্বাধিক ১৭ হাজার ৯৯৯টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৬ হাজার ৪৩৩টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৬৬৬টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ২ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৮ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন।
অঞ্চল বিবেচনায় এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন, খুলনা বিভাগে ৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং বরিশাল বিভাগে ২ জন রয়েছেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৬৪৫ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৩ হাজার ৪২৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৭৪ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ৯ হাজার ৮০ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ২২ হাজার ৫০৬ জনকে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৬৫৬ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৭ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৬১৮ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৯৯৮ জন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৮শ’টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৮ হাজার ২৪৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬১৪টি। বর্তমানে ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৩১টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৩৯টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ ১১ হাজার ৯৫টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৯৬ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৫২০ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ২৯ হাজার ১২৯ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৪ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৩৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৪৪ জন এবং এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৬৬৩ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৩ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ২১২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯১ লাখ ২৯ হাজার ১৪৬ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ১৮৭ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৭ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।