করোনার কারণে প্রায় এক বছর পর চালু হয়েছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দিদের সাথে স্বজনদের সাক্ষাৎ। পহেলা মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম। যদিও সাতটি শর্ত মানতে হচ্ছে সাক্ষাতপ্রার্থীদের। শর্ত অনুযায়ী, একজন বন্দির সাথে তার একজন স্বজনই দেখা করতে পারছেন। সাক্ষাতের সময় পাচ্ছেন মাত্র ১০ মিনিট।প্রায় এক বছর পর স্বজনদের সাক্ষাৎ পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হচ্ছেন বন্দি ও তাদের স্বজনেরা। সাক্ষাতের সময় অনেকের আনন্দ অশ্রু ঝরতে দেখা যাচ্ছে। কারাগারের সাক্ষাৎ কক্ষ হয়ে উঠছে যেন ‘আনন্দ নিকেতন’।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চের শেষের দিকে করোনার কারণে বন্দিদের সাথে তাদের স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। গত তিনদিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনশ’ ৬০ জন বন্দিদের সাথে তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্টজন সাক্ষাৎ করেছেন। কারা সূত্র জানায়, সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন মামলার বন্দিরা প্রতি ১৫ দিনে একবার দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। এর বাইরে আলোচিত বিশেষ করে জেএমবি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, রাষ্ট্রদ্রোহী, দুর্ধর্ষ, যুদ্ধাপরাধী এবং মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা মাসে একবার তাদের স্বজনদের সাথে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের স্বজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা রাখছে কারা কর্তৃপক্ষ।
বুধবার সরেজমিনে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সাক্ষাৎ কক্ষের সামনে কথা হয় মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার এক বন্দির স্বজন ৭২ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ রফিকুলের সাথে। তিনি জানান, তার ছেলে চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথম দেখেন ছেলেকে। অসুস্থ শরীর নিয়ে এক বছর খুব কষ্টে দিন কেটেছে তার। করোনার সময় তিনি ভেবেছিলেন হয়তো ছেলের সাথে আর দেখা হবেনা। হঠাৎ বুধবার সকালেই জানতে পারেন বন্দিদের সাথে নতুন করে সাক্ষাৎ চালু হয়েছে। তাই ছেলের সাথে দেখা করতে আসেন তিনি। কথা বলতে বলতে কারাগারের ভিতর থেকে সাক্ষাৎ প্রার্থীর ডাক পড়ায় কাঁদতে কাঁদতে সাক্ষাৎ কক্ষের দিকে যান বৃদ্ধ রফিকুল।
এ বিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, বন্দিরা স্বজনদের সাথে দেখা করতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। হাজতিরা আদালতে মামলার তারিখে দেখার সুযোগ পেলেও কয়েদীরা সেই সুযোগ পায়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সকল নিয়মের মধ্যে থেকেই পহেলা মার্চ থেকে সাক্ষাৎ করানো হচ্ছে বলে জানান তুহিন কান্তি খান।