আজ - বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৬:৫৩

এমপিপুত্রের হাত থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলেন মিন্নি!

এমপি পুত্র সুনামের চাপে রিফাতের বাবা সংবাদ সম্মেলন করে খুনের নেপথ্যে মিন্নির সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তুলেছেন। এমনকি এমপিপুত্র খুনিদের বাঁচাতে মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবিতে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার পর এমন নৃশংসতার গোটা দেশ যখন স্তম্ভিত, বিচার দাবিতে সোচ্চার ঠিক তখনই আসামিদের পক্ষে নামেন তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতারা। তারই অংশ হিসেবে চেষ্টা চলতে থাকে রিফাতের স্ত্রী আয়শা ছিদ্দিকা মিন্নিকে খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার নানা পায়তারা।

এক নারী তার স্বামীকে বাঁচাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একাই খালি হাতে লড়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার পরের দিন স্থানীয় সাংসদের ছেলে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়েটিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ও নানাভাবে সমালোচনা শুরু হলে এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ পিছ পা হন। কিছুদিন চুপ করে থাকলেও এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ থেমে থাকেননি। বরগুনায় নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা ছিদ্দিকা মিন্নির পিছুও ছাড়েননি। মিন্নির দুর্নাম রটাতে এখন রীতিমত মাঠে নেমেছেন এই সুনাম। সুনামের চক্রান্ত থেকে রক্ষা পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মিন্নি।

অভিযোগ ওঠেছে, এই এমপিপুত্রেরই চাপে রিফাতের বাবা সংবাদ সম্মেলন করে খুনের নেপথ্যে মিন্নির সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তুলেছেন। এমনকি এমপিপুত্র খুনিদের বাঁচাতে মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবিতে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন। কর্মসূচীতে রাখা বক্তব্যে এমপিপুত্র মিন্নিকে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান। সুনাম একটিবারও পলাতক আসামীদের গ্রেফতার বা গ্রেফতারকৃতদের শাস্তি নিয়ে কোন বক্তব্য দেননি। দেশ তোলপাড় করা এমন ঘটনায় এমপি পুত্রের এমন অবস্থান ব্যাপক সমলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি জড়িতদের বাচাতেই মাঠে নেমেছেন এমন মন্তব্য এখন বরগুনাবাসীর মুখে শোনা যাচ্ছে।

মিন্নিকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের দাবিতে বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্দন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বরগুনা সর্বস্তরের জনগনের ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মনে করা হচ্ছে, এমপিপুত্র সুনাম ছিলেন নেপথ্যের কারিগর। বরগুনা-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষযক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথের বক্তব্যে এবং অংশ গ্রহণকারীদের উপস্থিতিই তার প্রমাণ দেয়। সুনামের কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী হলে যারা অংশ নেন, সেই পরিচিত মুখগুলোকেই ওই মানববন্ধনে দেখা গেছে। মানববন্ধনের একটা বড় সময়জুড়েই সুনাম দেবনাথ বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও রিফাতের বাবা আর চাচা সাদামাঠা ধরনের সংক্ষিত বক্তব্য দেন।

সুনাম তার বক্তব্যে বলেন, রিফাতের পরিবার সংবাদ সন্মেলনে মিন্নির বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো তুলেছে, তার বড় ধরনের তদন্ত হওয়া দরকার। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবি এবং ভিডিও দেখা যাচ্ছে, তাতে আমাদের সকলের মনে হয় এর তদন্ত হওয়া দরকার। তার পর কে আইনের আওতায় আসবে কী আসবে না তদন্তেই তা বেরিয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে মিন্নি বলেছেন, ‘অস্ত্রধারীদের তোপের মুখে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। ভিডিও ফুটেজে, সারাসরি নিজের চোখে মানুষ সে দৃশ্য দেখেছে। আমার শ্বশুর ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, সেখানে আমি ১নম্বর সাক্ষী। এখন আমার শ্বশুড়কে ভুল বুঝিয়ে চাপ প্রয়োগ করে প্রভাবশালী ও বিত্তশালীরা মামলাটিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার পায়তারা করছে। সে কারনেই আমাকে ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত করতে আসামি ও তাদের পক্ষের লোকজন ওঠে পড়ে লেগেছে।’ যারা খুনিদের বাচাতে চাইছেন, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতা কামনা মরেন মিন্নি।

সুনাম তার বক্তব্যের কোথাও মিন্নির নাম উচ্চারণ করেননি। রিফাতের বাবার প্রতি সমাবেদনা জানাতে গিয়ে সুনাম বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই খুনিদের ব্যাপারে প্রশাসনকে কোন তথ্য দেইনি। তাদেরকে কেউ কেউ নিজেদের কাছে অপরাধীদের লুকিয়েও রেখেছি। সুনাম আরো বলেন, রিফাত হত্যার ব্যাপারে পুলিশ তাদের সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করেছে। আমরা যতটুকু পেরেছি, পুলিশ প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছি।

শনিবারের প্রেস কনফারেন্সকে ইঙ্গিত করে সুনাম তার বক্তব্যে বলেন, রিফাত শরীফের পরিবারও তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে চাচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই মামলার তদন্তের স্বার্থে, আরো আগ্রগতির স্বার্থে ওনি (রিফাতের বাবা) যে অভিযোগগুলো করেছেন, সেগুলো তাদের (পুলিশ) নজরে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, রিফাত হত্যার বিচার হচ্ছে। ভাল ভাবেই হচ্ছে। তবে আরো ভালভাবে হতে হবে এটাই আমাদের কামনা।

এদিকে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে মিন্নি বলেন, আমার শ্বশুড় অসুস্থ্, ছেলের শোকে বিধ্বস্ত। আর এ সুযোগে প্রভাবশালীরা তাকে চাপ প্রয়োগ করে নিজেরা বিচারের আওতামুক্ত থাকতে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন। নিজেকে নির্দোষ উল্লেখ করে মিন্নি বলেন, ঘটনার দিন সকাল ১০ টার দিকে রিফাত কলেজে ঢুকে তাকে বলেছিলো, তার বাবা দুলাল শরীফ এসেছেন। কলেজ গেটে এসে শ্বশুরকে না দেখে আবার কলেজে ঢুকতে চেয়েছিলেন মিন্নি। তখনই রিশান ফরাজীসহ আরো অনেকেই তার স্বামী রিফাত শরীফকে ঝাপটে ধরে কলেজের বাইরে রাস্তায় নিয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিল-ঘুষি, পরবর্তীতে কোপানো শুরু করে।

মিন্নি পৃথককভাবে বলেন, ‘আজ আমাকে একটি মহল বিচারের আওতায় আনার কথা বলছেন। আমার শ্বশুড় যাদের কথায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন, তারা কারা। কাদেরকে আশ্রয় প্রশয় দিতো তারা। তা বরগুনাবাসী জানেন। মূলত আসামীদেরকে বাঁচানোর জন্যই আমার দিকে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’

রিফাত খুনের আগের দিন নয়ন বন্ডের বাসায় মিন্নি গিয়েছিলেন বলে মিডিয়াতে নয়ন বন্ডের মায়ের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে মিন্নি বলেন, ২৫ জুন দুপুরে রিফাতের ফুফাতো বোন হ্যাপির চরকলমীর এলাকার বাসায় রিফাতের পুরো পরিবার গিয়েছিল। মিন্নিও তাদের সঙ্গেই ছিলেন।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, রিফাত শরীফের বাবা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সন্মেলনের আগে পরে কারা প্রেসক্লাবে গিয়েছিল। কিসের জন্য গিয়েছিল। তা বরগুনার সাংবাদিকরা জানেন।

খানজাহান আলী 24/7 নিউজ / সাদাব হোসেন।

আরো সংবাদ