সাজ্জাদ গনি খাঁন রিমন :: যশোর জেলা ভ্রমণে গিয়ে কম করে হলেও অর্ধশতাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো যশোর কালেক্টরেট ভবন সেই ব্রিটিশ আমলে ১৮০১ সালে যশোর দরাটানা মোড়ে নির্মিত হয় এই কালেক্টরেট ভবন। এখনো স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ভবনটি। ৮৪ সালে ভবনটি করা হয় দ্বিতল।
কেশবপুর উপজেলায় কবি মধুসূদন দত্তের বাড়ি, বাংলা কবিতায় সনেটের প্রবর্তক বিখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান এই সাগরদাঁড়িতে রয়েছে মধুপল্লী, তাঁর বাড়ি। যশোর বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে কেশবপুরের কপোতাক্ষ নদের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এই মধুপল্লী। প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করলে দেখা মিলবে কবির ভাস্কর্য, আর তার পরেই কবির সেই বাড়ি। বাড়িটি এখন জাদুঘর এবং গ্রস্থাগার করা হয়েছে। প্রতিদিন শত-শত দর্শণার্থী যান এই সাগরদাঁড়িতে একবার মধুসূদনের বাসভূমিকে দেখতে। ২৫ জানুয়ারি কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মেলা বসে সেখানে।
কেশবপুর উপজেলার ভদ্রা নদীর তীরে ভরত ভায়না গ্রামের ভরত দেউল জেলার অন্যতম দেউল। দেউলটিকে একটি ছোটখাটো টিলার মতো দেখায়। এই দেউলটি খিস্ট্রীয় ২য় শতকের গুপ্তযুগের নিদর্শন বলে ধারণা করা হয়। ১৯২৩ সালে এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত খননের কাজ চলে এই স্থানে। প্রায় ৯৪টি কক্ষ, একটি মঞ্চ, কয়েকটি মন্দিরের দেখা মিলেছে এই ভরত ভায়নায়, পাওয়া গিয়েছে নানা পোড়ামাটির ফলকে নারীর মুখমন্ডল এবং নানা নকশার বৃহদাকার টেরাকোটা। এই উপজেলায় রয়েছে মির্জানগর হাম্মামখানা। সুবেদার শাহ সুজার শ্যালকপুত্র মীর্জা সফসিখানে ১৬৪৯ খ্রীস্টাব্দে যশোরের ফৌজদার নিযুক্ত হবার পর তার নামানুসারেই এলাকাটির নাম হয় মির্জানগর, যেখানে একটি নবাববাড়ি ছিল। স¤্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে নুরলা খাঁ ফৌজদার নিযুক্ত হলে তিনি সেখানে সুবিস্তৃত পরিখা খনন করেছিলেন এবং একাংশে বানিয়েছিলেন একটি হাম্মাম যেটি এখনও সেই যুগের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
জেলা শহরের মুরোলি ইমামবাড়া স্থাপিত ইমামবাড়া অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। হাজী মোহাম্মদ মহসিন কর্তৃক ১৮০৫ সালে নির্মিত এই ইমামবাড়ার ভেতরের পিলারে এবং দেয়ালে আল্লাহু, হাসান, হুসেইন লেখা অনেক ক্যালিগ্রাফি দেখতে পাওয়া যায়। শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান।
জেলার অভয়নগর উপজেলায় রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারঘাট পার হয়ে শংকরপাশা ইউনিয়নে সুবিশাল বৃত্তাকার নান্দনিক পুড়াখালি বাওড়। পদ্ম আর শালুকের মেলার কালো টলটলে অথৈ পানির চারপাশ ঘিরে অপরূপ প্রকৃতিক ভ্রমণ পিপাসুকে মুগ্ধ করবেই। শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে বাওড় অঞ্চল।
উপজেলার ভাটপাড়ার জগন্নাথধামও একটি দর্শনীয় স্থান। ২০০০ বছর পূর্বে ইতিহাস সুত্রে জানা যায়, এখানে ‘ভাট’ সম্প্রদায় বসতি স্থাপন করেছিল অভয়নগর উপজেলার এই বাঘুটিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথধামে। ঐতিহ্যবাহী এই গ্রামটি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে যেমন পবিত্র স্থান, তেমনই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এ স্থানকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক ঘটনার পরিব্যাপ্তি।
জগন্নাথধামের পাশেই রয়েছে আরেকটি প্রাচীন মন্দির। মন্দিরে শ্রী চৈতন্য, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতাচার্যের মূর্তিগুলো দর্শককে মুগ্ধকরবে।
ভাটপাড়া বাজারের পশ্চিমপ্রান্তে রথমন্দির অবস্থিত। প্রতিবছর অসংখ্য লোকের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে ‘রথমেলা’। একসময় ভাটপাড়া রথমেলা লক্ষাধিক লোকের পদচারণায় লোকারণ্য হয়ে উঠত।
যশোর শহরতলিতে চাঁচরার রাজা নীলকন্ঠ রায় আনুমানিক ১৭৪৫ সাল থেকে ১৭৬৪ সালের মধ্যে ১১টি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বলে ইতিহাসে জানা যায়। রাজা তার মেয়ে অভয়ার অনুরোধে ১১টি কষ্টিপাথর দিয়ে ১১টি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে দেন এবং এই অভয়নগর নামটি রাজা নীলকণ্ঠের মেয়ের নামানুসারেই করা হয়েছিল। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে দুর্বৃত্তরা সে ১১টি কষ্টি পাথরের মূর্তিই চুরি করে নিয়ে গেছে। মন্দিরের বাইরে দক্ষিণ দিকে আছে একটি প্রধান প্রবেশপথ। প্রতিটি মন্দিরে প্রবেশের জন্য আছে খিলানাকৃতির দরজা ও দেয়ালে পোড়ামাটির ফলকে চোখ ধাঁধানো কারুকাজ। মন্দিরের চারদিকেই প্রাচীরবেষ্টিত। মন্দিরটি সরকারি পদক্ষেপে সম্প্রতি সংস্কার করানো হয়েছে।
দেশের প্রধানতন স্থলবন্দর বেনাপোলবন্দর দর্শনীয় স্থানের একটি। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত নির্দেশক এই স্থানে গিয়ে বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে ভারতকে। এই সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।