যশোর প্রতিনিধি।। করোনা বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবনধারা। বদলে যাচ্ছে চলার পথ। রাজনৈতিক অঙ্গনেও ‘নতুন চলার পথ’ সৃষ্টি করেছে অদৃশ্য এ ভাইরাস। সীমান্ত জেলা যশোরে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত মানুষ। তাই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ‘দ্বন্দ্ব’ ভুলে স্বপ্রণোদিত হয়েই বৈঠক করেছেন স্থানীয় পাঁচ সংসদ সদস্য। বিপন্ন-অসহায় মানুষের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা। জেলার আরেকজন এমপি লন্ডনে অবস্থান করলেও বৈঠকের বিষয়ে তিনি অবগত। বাকিদের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন তিনিও।
মহামারীর এ সংকটে ছয় এমপির ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণায় স্বস্তি ফিরেছে যশোরের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ যেন নতুন মেরুকরণ। যদিও পুরনো অভিজ্ঞতায় এ ‘ঐক্য’ কতদিন টিকবে তা নিয়ে কিছু নেটিজনেরা নানা কথা বললেও বেশিরভাগই দেখছেন ভালোভাবেই। আশা করছেন, করোনা মহামারীতে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেদের সর্বসামর্থ্য দিয়ে জনসেবার পাশাপাশি আগামীতে জেলার উন্নয়ন করবেন ছয় এমপি।
আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। স্বাধীন বাংলাদেশের শত্রুমুক্ত প্রথম জেলা যশোরকে অনন্য গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবারই এ জেলা থেকে হুইপ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন কেউ না কেউ।
তবে নানা কারণে জেলার ছয় সংসদের মধ্যে বিরোধ স্পষ্ট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ কিংবা খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কখনো ‘বুঝ মানিয়ে’ আবার কখনো ‘কঠোর হুশিয়ারি’ উচ্চারণ করে বসিয়েছেন এক টেবিলে। তবে কয়েক মাস যেতে না যেতেই ফিরে এসেছে আগের ‘দা-কুড়াল’ সম্পর্ক। এসব ঘটনায় একজন আরেকজনকে দোষ দিয়েই দায় সারেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, সাংসদদের অনৈক্যের কারণেই জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন পিছিয়েছে। সেই সঙ্গে দলের মধ্যে হাইব্রিড নেতারা লুফে নিয়েছেন নানা সুবিধা। কোনো কোনো উপজেলায় নিজেদের দল ভারী করতে ‘আশ্রয় দেওয়া’ বিএনপি-জামায়াতের লোকজন খোদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে। উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মৌন সমর্থন দিয়ে ডুবানো হয়েছে অসংখ্য নৌকার মাঝিকে।
তবে এবার আর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চাপ কিংবা হুশিয়ারিতে নয়, যশোরের করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকতে একজন প্রতিমন্ত্রী ও পাঁচ এমপি স্বপ্রণোদিত হয়েই ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছেন। পুরনো সব ভেদাভেদ ভুলে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে তার ঢাকাস্থ সরকারি বাসভবনে বসেন বৈঠকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার, যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায়, যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব) নাসির উদ্দিন। তবে যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহম্মেদ লন্ডনে অবস্থান করায় তিনি সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তিনি অবশ্য সব বিষয়ে অবগত। বৈঠকে নেওয়া সব সিদ্ধান্তে ঐকমত্যও পোষণ করেছেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায় বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীসহ আমরা জেলার ছয়জন এমপি করোনা মহামারীতে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের পাশে থাকব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আগে তো এমপিরা যে যার মতো করে চলতেন, কোনো সমন্বয় ছিল না। তবে আমাদের এ ঐক্যবদ্ধতা দেরিতে হলেও এখন থেকে জেলার প্রত্যেকটি সেক্টরের উন্নয়নে একসঙ্গে জোরালো ভূমিকা রাখব। এ ছাড়া সামনে সংসদ নির্বাচন আসছে। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে সব অপশক্তির জবাব দিতে আমরা এখন থেকেই দলকে সুসংগঠিত করব।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘আমারা সবাই ঐক্যবদ্ধ। এখন থেকে কারও মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না। আমরা সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়নে নৌকা প্রতীকের ভোটে নির্বাচিত এমপি।’ ঐকমত্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যা দেখছেন, শুনছেন এটাই সত্য; এটা বাস্তবতার সঙ্গে মিলবে।’