মাসখানেক পর ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। তাই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারা দেশে কোরবানির পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
খামারি ও বেপারিরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন। তবে চাহিদার তুলনায় কোরবানি পশুর জোগান বেশি থাকায় উপযুক্ত দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। আর প্রতিবেশী দেশ থেকে গরু এলে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, গত বছরের মতো এবারও কোরবানি পশুর সংকট হবে না। বরং চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি থাকবে।
২০১৮ সালে কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫ লাখ। গত বছর চাহিদা ছিল ১ কোটি ১১ লাখ। এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে চাহিদা বাড়বে না বলে মনে করছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
এবার কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশুর জোগান দেয়া যাবে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি রয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও জরিপ করা হচ্ছে। জরিপ শেষ হলে পূর্ণাঙ্গ চাহিদা ও জোগানের তথ্য জানা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার যুগান্তরকে বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশীয় উৎস থেকে কোরবানি পশুর চাহিদা পূরণ হচ্ছে। গত বছর ১ কোটি ১১ লাখ পশুর চাহিদার বিপরীতে ১ কোটি ১৮ লাখ পশুর জোগান ছিল।
এবারও দেশে কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশুর জোগান বেশি আছে। তিনি আরও বলেন, এবারের কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশীয় গরু-ছাগল উৎপাদনে ছোট-বড় প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক খামারি কাজ করছেন। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে আরও অনেক ছোট-বড় খামার গড়ে উঠেছে। এগুলো থেকে কোরবানির পশুর জোগান আসবে।
বিশেষ করে চর ও উপকূলীয় এলাকায় গরু, ছাগল ও মহিষ পালনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। অনেকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গবাদিপশু লালনপালন করেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, খামারগুলোতে স্বাস্থ্য হানিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর প্রভাবে খামারিরা প্রাকৃতিকভাবে গরু মোটাতাজা করে বিক্রির জন্য তৈরি করছেন।
রাজধানীর কেরানীগঞ্জ উপজেলার নতুন সোনাকান্দা এলাকার গরুর খামারি মো. বিল্লাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এবারের কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ২২টি গরু প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করতে অনেক টাকা পুঁজি খাটিয়েছি।
তবে বিক্রি হবে কিনা জানি না। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এবার কোরবানি কম হতে পারে। এছাড়া দেশে কোরবানি পশুর জোগান অনেক। ফলে উপযুক্ত দাম পাওয়া নিয়ে তিনি শঙ্কায় আছেন।
সাভারের হাসিব অ্যাগ্রোর মালিক মো. হাসিব যুগান্তরকে বলেন, ছোট-বড় ৪৫টি গরু বছর ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করছেন। এতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি নিয়ে তিনি চিন্তিত। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে ভয় হচ্ছে- পশু বিক্রি না করতে পারলে বছরজুড়ে খাটানো টাকার পুরোটাই লোকসান হয়ে যাবে।
আবার পরের কোরবানি পর্যন্ত এ গরু লালনপালন করতে অনেক টাকা খরচ হবে। যশোর সদর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের খামারি শরিফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, একটি গরুর জন্য দিনে ১৫০-১৭৫ টাকা খরচ হয়।
প্রতিদিন খাবার হিসেবে খৈল, ভুসি, কুড়ো, ফিড ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। এ বছর ১৮টি গরু মোটাতাজা করেছি। মানভেদে প্রতিটি গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত হবে। এবার করোনাকালে গরু বিক্রি করে লাভের আশা করতে পারছেন না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, পাশের দেশ থেকে বেশি মাত্রায় গরু এলে দেশি গরুর দাম কমে যাবে। তখন আমাদের লোকসান গুনতে হবে। দেশের খামারগুলোয় পর্যাপ্ত গরু থাকায় ভারত থেকে গরু আসা বন্ধের দাবি জানান তিনি। এতে খামারিরা একটু লাভের মুখ দেখবেন।
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটের ব্যবসায়ী বরকত আলী যুগান্তরকে বলেন, দেশের খামারগুলোয় বর্তমানে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল ও মহিষ রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দাম অনেক কম হতে পারে। তিনি বলেন, প্রতিবছর ঈদ ঘিরে ভারত থেকে নানাভাবে গরু আসে। এতে গুরুর দাম কমে যায়। এবার যাতে অন্য দেশ থেকে গরু না আসে, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে।
জানা গেছে, করোনাকালে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্তদেরও আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।
আগে যারা প্রতিবছর পশু কোরবানি দিতেন, তাদের অনেকে এবার কোরবানি না-ও দিতে পারেন। আর পশু বিক্রি কম হলে দাম পরে যাবে। এতে অনেক খামারি ক্ষতির মুখে পরবেন।