আজ - রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৩:২৫

খালেদার কারবাসের ১ বছর, নিরব পার্টি নিভৃত কার্যালয়।

আল আমীন রাব্বানী : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ড পেয়ে এক বছর ধরে কারাগারে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত বছরের (২০১৮ সাল) ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয় তাকে। শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) কারাবাসের এক বছর পূর্তি হলো। তবে এনিয়ে তার বাসভবন বা দলীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও কর্মসূচি দেখা যায়নি।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান-২ এর বাসভবন ‘ফিরোজা’ ও তার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয় এবং নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের ছিল না কোনও আনাগোনা। কর্মচারীরা বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

এদিন সকাল ১১টায় খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে কথা হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টিমের সদস্য মো. আজিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ম্যাডামকে ছাড়া একটা বছর কেটে গেলো। খুব খারাপ লাগছে। গত বছর এই সময় ম্যাডাম বাসা থেকে আদালতের উদ্দেশে রওয়া দেন। বাড়ির সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মন খারাপ।

কোনও কর্মসূচি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না এখানে কোনও কর্মসূচি নেই। তবে বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে একটি প্রতিবাদ সভা আছে বলে জানি।’ এই বাড়িটির নিরপত্তায় ১৬ জন এবং ভেতরে কাজের জন্য পাঁচ জন কর্মী রয়েছেন। কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা দলীয় ব্যক্তিরা তাদের বেতনভাতা পরিশোধ করছেন বলেও জানান আজিজুর রহমান।

খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে সেখানে দুবার এসেছিলেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান। তবে খালেদা জিয়ার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা প্রায়ই এসে বাড়িতে অবস্থানরত লোকজনের খোজঁ-খবর নিয়ে যান।

গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি জেলে যাওয়ার আগের দিন (৭ ফেব্রুয়ারি) সর্বশেষ গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়েছিলন খালেদা জিয়া। সেদিন রাত ১২টার দিকে সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের বিদায় দিয়ে বাসভবনে ফিরে আসেন তিনি।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে গুলশান কার্যালয়ে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকরি করছেন জয়ন্ত। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সর্বশেষ কারাগারে যাওয়ার আগের রাত ৯টার দিকে এই অফিসে আসেন এবং রাত ১২টার দিকে বের হয়ে যান।’

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় নেই জানিয়ে জয়ন্ত আরও বলেন, ‘ম্যাডামের জন্য আমাদেরও খারাপ লাগে। তিনি থাকতে আসা-যাওয়ার সময় আমাদের খোঁজ-খবর নিতেন। ম্যাডাম সাধারণত রাত ৯টার পর অফিসে আসতেন। রাত ১২-১টার পরে কার্যালয়ে থেকে বাসায় যেতেন। ওই সময় সব পর্যায়ের নেতারাও অফিসে থাকতেন। এখন নেতাকর্মীরা তেমন একটা আসেন না।’

এখন সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সিনিয়র নেতারা অফিসে আসেন বলে জানিয়েছেন জয়ন্ত। তিনি বলেন, ‘তবে নির্বাচনের সময় অনেক রাত পর্যন্ত নেতারা অফিস করেছেন। আর নির্বাচনের পর থেকে তেমন কেউ আসেন না।’

নিজেদের বেতন-ভাতার ব্যাপারে জয়ন্ত বলেন, আমরা একটি সিকিউরি গার্ড কোম্পানির অধীনে এখানে চাকরি করি। সেই কোম্পানি থেকেই আমাদের বেতন দেওয়া হয়। তবে দুই ঈদে বিএনপির সিনিয়র কয়েজন নেতা কিছু বকশিস দিয়েছন।

এদিকে, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থাকেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তাকে ঘিরে আরও কয়েকজন নেতাকর্মীও কার্যালয়ে রাত যাপন করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনও করেন রিজভী। তবে আজ (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর একটার দিকে নয়াপল্টন গিয়ে জানা যায়, রুহুল কবির রিজভী সকাল থেকে কার্যালয়ে নেই। নয়াপল্টনে শুক্রবার কোনও কর্মসূচি ছিল না।’

জানা গেছে, নয়াপল্টন কার্যালয়ে সিকিউরি গার্ডের চাকরি করেন দুই জন। তারা বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন কোম্পানি থেকে।

এপ্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ম্যাডাম না থাকলেও নিয়মিত তার অফিস খোলা হয়। ম্যাডামের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের, ২০ দলীয় জোটের, ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, নেতারা নিয়মিতই অফিসে আসেন।’

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। সেখানে তার সঙ্গে রয়েছেন গৃহকর্মী ফাতেমা। এরমধ্যে তাকে (খালেদা জিয়া) দুবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছিল। প্রথমবার কয়েকঘণ্টা হাসপাতালে কাটানোর পর তাকে ফের কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়। তবে দ্বিতীয় দফায় বেশ কিছুদিন বিএসএমএমইউ-তে ছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়ার প্রথমে পাঁচ বছরের এবং পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার। এই দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত