আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - দুপুর ২:২৯

খালেদুর রহমান টিটো (জন্ম ১৯৪৫ সাল ১ মার্চ – মৃত্যু ১০ জানুয়ারী ২০২১)

পারিবারিক পরিচিতি: বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জনাব খালেদুর রহমান টিটো ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম এ্যাডভোকেট হবিবুর রহমান। তিনি একজন এম. এ. বি. এল ছিলেন। মাতা মরহুম করিমা খাতুন একজন এম. এ. এম. এড ছিলেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে জনাব রহমান দ্বিতীয় স্থানে। বড় ভাই মাসুকুর রহমান তোজো যশোরের একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডবল অনার্স নিয়ে ফিজিক্সে মাস্টার্স পাশ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। তাঁর ছোট পাঁচ বোনের সবাই মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। বড় বোন রহমান শাহীন একজন এম. এ. বি. এড। বর্তমানে তিনি লন্ডনে শিক্ষকতা করছেন। আর এক বোন সামিনা রহমান নিতা এটমিক এনার্জির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকতা। তাঁর স্বামী মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। ছোট বোন ডাঃ শারমিন রহমান সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের গাইণী বিভাগের চিপ কনসালটেন্ট। তাঁর স্বামী একজন ইউরোলজিস্ট হিসেবে সৌদি আরবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৭২ সালের ১৮ মে যশোর চুটিপট্টিার মেয়ে রওশন আরা বেগম বিন্তক এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। জনাব রহমান তিনি তিন পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী ২০০৭ সালে মারা যান।

শিক্ষাজীবন :
জনাব রহমানের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৬০ সালে এখান থেকে ম্যট্রিক পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকার কায়েদে আজম কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়ের পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে কারাগারে অবস্থানকালে যশোর এম. এম. কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। পরবর্তীতে মাস্টার্স করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হয়েও বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মাস্টার্স আর শেষ করা সম্ভব হয়নি।

রাজনৈতিক জীবন :
জনাব খালেদুর রহমান টিটো রাজনৈতিক পরিমন্ডলের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। ১৯৬৩ সালে যশোর এম. এম. কলেজ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়নে সম্পৃক্ততার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করেন।

১৯৬৭ সালে কলেজের লেখাপড়া শেষে করে তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে শ্রমিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন। শ্রমিক রাজনীতিতে থাকাকালীন তিনি মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হন। তিনি ঐ সময়ে শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করতে সমর্থ হন। খালেদুর রহমান টিটে যশোরে প্রথম রিকসা ইউনিয়ন তৈরী করে তাদেরকে সংগঠিত করেন এবং ব্যক্তিগত সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি কৃষক আন্দোলন জোরদার করতে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও কালীগঞ্জ এলাকায় ভ্রমণ করেন। ১৯৭০ সালের শেষের দিকে তাঁর সাথে দলের রাজনৈতিক মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। শ্রেণী শত্রু  উৎপাটনের পদ্ধতিকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। ফলে এক সময়ে দল থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় তিনি পুলিশি অভিযানের কারণে কুষ্টিয়াতে চলে যান। ঐ বছরের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আবার ভারতে চলে যান। বাম রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে সেখানে তিনি শান্তিতে থাকতে পারেননি আবার পূর্ব পাকিস্তানেও ঢুকতে পারতেন না। এর কারণ হিসেবে ঐ সময় পাক আর্মি তাঁর মাথার দাম ধার্য করেছিলো ১০ হাজার টাকা। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

স্বাধীনতার পর তিনি আবার দেশে ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে বড়ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হলে সংসারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করার জন্য এসময় তিনি ব্যবসা শুরু করেন এবং আব্দুস সামাদ মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষাকতার চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী-ন্যাপ) এ যোগদান করেন। ৭৪ সালেই ন্যাপের জেলা সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৭৭ সালে ন্যাপের যশোর অঞ্চলের সভাপতি প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আওলমগীর সিদ্দিকী মারা গেলে তিনি ন্যাপের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তিনি ন্যাপের পক্ষ থেকে তাঁকে সমর্থন করেন। নির্বাচনের পর বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হলে তিনি ন্যাপের সাথেই থেকে যান। ১৯৮১ সালে ‘গণতান্ত্রিক পার্টি’ গঠিত হলে তিনি এই রাজনৈতিক দলের সথে যোগ দেন। গণতান্ত্রিক পার্টির ১১জন স্টান্ডিং কামিটির মেম্বারদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। ১৯৮৪ সালে পৌরসভার নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে জাতীয় পার্টি গঠিত হওয়ার পর ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি পক্ষ থেকে এম. পি নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। ১৯৯০ সালের মে মাসে তিনি শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সরকার পতনের ফলে ১৯৯১ সালে তাঁকে জেলে যেতে হয়। এ সময় তিনি জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ সালে দলকে নতুনভাবে সাজানো হলে তিনি কারাগারে থাকাকালীন কৃষি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৯১ এর শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব হন এবং ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগমুহুর্ত পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল এরশাদের সাথে তাঁর মতবিরোধ হয়। এ সময় বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জনাব খালেদুর রহমান’কে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মধ্যদিয়ে তাঁর দলকে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বেগম জিয়া জনাব রহমানকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তিনি নির্বাচন বয়কট করেন।

২০০৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা খালেদুর রহমান টিটো’কে তাঁর দলে যোগদানের জন্য আহবান জানান। ২০০৬ সালে ১১ জানুয়ারী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের করে প্রায় ২বছর শাষনকার্য চালায়। অবশেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারী সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করলে যশোর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন পান আওয়ামী লীগের সাবেক এম. পি জনাব আলী রেজা রাজু। কিন্তু কিছু দিন পর জনাব রাজুর নমিনেশন প্রত্যাহার করে খালেদুর রহমান টিটো’কে যশোর সদর আসনে নমিনেশন দেয়া হয়। জনাব খালেদুর রাহমান টিটো বিএনপির বর্ষিয়ান নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে নির্বাচনে পরাজিত করে যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  

বাল্যজীবন :
ছোটবেলায় জনাব খালেদুর রহমান একজন ভাল খেলোয়ার ও একজন ভাল তবলাবাদক ছিলেন। 

সামাজিক কর্মকান্ড :
জনাব রহমানের হাত দিয়ে যশোরের বহু উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এরশাদকে দিয়ে ভবদা নদী খননের জন্য ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন, যশোর সিটি কলেজকে জাতীয় করণসহ সমগ্র যশোরে শিক্ষা ব্যাবস্থার উন্নয়ন, বিভিন্ন স্কুল, কলেজের উন্নয়ন ও সংস্কার সাধন। যশোর মেডিক্যাল কলেজ গঠন প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকাসহ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাক্রম শুরু করার বিষয় তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইনস্টিটিউটের নানাবিধ সংস্কার ও উন্নয়ন করেন। সুর বিতান সংগীত একাডেমীকে উন্নয়নেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে।

সূত্র – যশোর ইনফো

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত