আজ - রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - দুপুর ২:১৯

খুলনা ‍বিভাগ এখন করোনার আঁতুর ঘর

করোনার আঁতুর ঘরে পরিণত হয়েছে খুলনা। ভাইরাসটির ভয়াল পরিণতির কথা জেনে বুঝেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাফেরা করছে মানুষ। ঘরে থাকতে চাইছে না কেউ। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ছে ঘর ছেড়ে। ফলে করোনার হটস্পট খুলনা বিভাগে দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও হাসপাতালগুলোকে।

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে এখন যেসব রোগী আসছে, তাদের শতকরা ৭০ ভাগই গ্রাম এলাকার। এমন সময় তারা আসছেন, যখন তাদের চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর থেকে দেয়া তথ্যানুযায়ী, এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ২ জুলাই বিভাগের ১০ জেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ২০১ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা যায় ২৭ জন। পরের দিন ৩ জুলাই এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৩৯ ও ৩২ জন। আর ৪ জুলাই এক হাজার ৩০৪ ও ৪৬ জন।

যা ৫ জুলাই আরও বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৪৭০ ও ৫১ জনে। ৬ জুলাই তা একটু কমে এক হাজার তিন শ’ ও ৪০ জন হলেও ৭ জুলাই রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত হয় এক হাজার নয় শ’ এবং মারা যায় ৬০ জন। যা আজ ৮ জুলাই একটু কমে যথাক্রমে এক হাজার ৭৩২ ও ৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ মাঝে মধ্যে একটু কমবেশি হলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক।

সূত্র অনুযায়ী, বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে খুলনা জেলার করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। এরপর কুষ্টিয়া ও যশোরে বেশি লোক আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার অবস্থাও খুব একটা ভালো না। অন্য জেলাগুলো থেকেও প্রতিদিন মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সরকারি এই হিসেবের বাইরেও অনেকে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আর এদের সংখ্যা শহরের তুলনায় গ্রামেই বেশি। স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা করার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, স্বাস্থ্যবিধি না মানাই সংক্রমণ বৃদ্ধির বড় কারণ। এর ফলে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। এছাড়া দেরি করে পরীক্ষা করা এবং হাসপাতাল বা বাসা-বাড়িতে করোনা রোগীর সঙ্গে দেখা করা ব্যক্তিদের মাধ্যমে সংক্রমণ বহুগুণ বাড়ছে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, যেসব রোগীর ডায়বেটিস, হার্টের সমস্যা রয়েছে; লিভারের রোগে আক্রান্ত ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত; অ্যাজমা, হাইপারটেনশন, প্রেশার রয়েছে তারা করোনা আক্রান্ত হলেই অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা চেষ্টা চালিয়েও তাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারছেন না। এছাড়া দেখা গেছে বেশি মারা যাচ্ছেন বয়স্ক রোগীরা।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই হাসপাতালে আসছেন শেষ মুহূর্তে। ততক্ষণে তাদের শারীরিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ছে। বেশিরভাগ রোগীর অক্সিজেন লেভেল নেমে যাচ্ছে ৮০-এর নিচে। এ সমস্ত রোগীই মৃত্যুর তালিকা বাড়াচ্ছেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, যেসব রোগী গ্রাম থেকে এসে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকেন। দেখা যায় তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮০-এর নিচে। প্রথম থেকে তারা যথাযথ চিকিৎসা নেননি অথবা করোনার পরীক্ষা করিয়েছেন অনেক দেরিতে।

ফলে সংক্রমণে দেহের যে ক্ষতি হওয়ার সেটা আগেই হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা বা ট্রিটমেন্ট গোড়াতেই শুরু হলে হয়তো তাদের বাঁচানো সম্ভব হতো।

উল্লেখ্য, খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৩১ জন। আর আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৪১৬ জন।

আরো সংবাদ