আজ - শনিবার, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১০:২৪

গড়াই রুপসা পরিবহন,কারছে মানুষের জীবন।

খুলনা-ঝিনাইদহ মহাসড়কে গড়াই ও রুপসা পরিবহন একের পর এক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচলের কারণে এই পরিবহন দুটি পথচারীদের কাছে এখন ভয়ংকর যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়ার হাটবিলা-জামতলায় বেপরোয়া গতির রুপসা পরিবহনের একটি বাস উল্টে হেলপার জামাল হোসেন (৪৫) নিহত হয়েছেন। তিনি কেশবপুর উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের শামসুর রহমানের ছেলে। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ৪০ যাত্রী আহত হন। তাদের বেপরোয়া চলাচলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা। দুর্ঘটনা বাড়ার জন্য গন্তব্যে পৌঁছানোতে সময় বেঁধে দেয়াকে দায়ী করেছে প্রশাসন। আইন অমান্য করায় প্রায় গড়াই ও রুপসার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলেও চলাচল নিয়ন্ত্রনে আসেনি।

জানা গেছে, ৩ আগস্ট সকাল ৯ টার দিকে রূপদিয়ার হাটবিলা-জামতলায় রুপসা গড়াইসহ তিনটি গাড়ি দ্রুত গতিতে ওভারটেক করছিলো। এসময় যশোরগামী রূপসা পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৫৪৮১) বাস আরেকটি বাসকে ওভারটেক করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার উপর উল্টে যায়। দুর্ঘটনায় চাপা পড়ে হেলপার জামাল হোসেন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এসময় গুরুতর আহত যাত্রী শফিকুল (৪৫), মেজবাউল (৬৪) ও আবু সুফিয়ান (৩৬) আবুল খায়েরকে (৬৬) ভর্তি করে ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। স্থানীয়রা জানান, শিল্পনগরী নওয়াপাড়া ভাঙাগেট এলাকায় যানজটের কবলে পড়ে রুপসা- বাস। ফলে সেখানে সময় নষ্ট হয়। ফলে সময়মতো পৌঁছাতে বেপরোয়া গতিতে আসার পথে রুপদিয়া- জামতলা এলাকায় বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এর আগে নওয়াপাড়া ভাঙ্গাগেটে এলাকায় রুপসা পরিবহনের একটি বাস কেড়ে নেয় ইজিবাইক চালক অভয়নগর উপজেলার মশরহাটি গ্রামের সবর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৮) ও অজ্ঞাত এক যুবক।
মহাসড়কের কালীগঞ্জ বারোবাজার তেলপাম্পের কাছে গড়াই পরিবহনের একটি বাস দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছিলেন। এরমধ্যে ঘটনাস্থলে মারা যান ১১ জন। নিহতদের ৯ জন পুরুষ, ২জন নারী ও ১ জন শিশু। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন অন্ততঃ ৩০ জন। অতিরিক্ত গতির কারণে চালক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললে বাসটি সড়ক্রে ওপর উল্টে যায়। এছাড়া বিগত দিনে গড়াই পরিবহনের ধাক্কায় নিহত হয় সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের উত্তরপাড়ায় সাইফুল ইসলামের মেয়ে মালিয়া (৩), বাগডাঙ্গা গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে নির্মাণ শ্রমিক নাসির উদ্দিনের জীবন(৩৫)। বিভিন্ন পত্রিকা ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী গত দেড় বছরে খুলনা-ঝিনাইদহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৩ জন। এরমধ্যে গড়াই ও রুপসা পরিবহনের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আনিসুর রহমান জানান, গড়াই ও রুপসা পরিবহন এক আতংকের নাম। এ দুই পরিবহনের চালকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এভাবে বেপরোয়া চলাচলে মানুষ ক্রমেই ক্ষুব্ধ হচ্ছে। চুড়ামনকাটি বাজারের সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল দেখলেই বোঝা যায় তারা ফাঁকা স্থানে কতো গতিতে গাড়ি চালান। তারমতো আরো অনেকেই জানান, গড়াই ও রুপসা পরিবহন এখন ভয়ংকর যানে পরিণত হয়েছে। সব সময় বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। যে কোন ভাবেই সামনের যানবাহনকে অতিক্রম করার চেষ্ঠা থাকে গড়াই ও রুপসার চালকদের। এ কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। গড়াই ও রুপসা চালকদের লক্ষ্য অন্য কোন বাসকে টপকে সামনের কাউন্টারে পৌঁছে আগে যাত্রী উঠানো। এছাড়া নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোতে সময় বেঁধে কারণে তারা ছুটে চলে বেপরোয়া গতিতে। এসব কারণেই প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। সেই সাথে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সূত্র জানায়, প্রতিদিন ৩৬ টি গড়াই কুষ্টিয়া থেকে খুলনায় ছেড়ে আসে। আর খুলনা থেকে ৪৩টি রুপসা পরিবহনের বাস কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে যায়। রুপসা পরিবহন ৯ মিনিট এবং গড়াই পরিবহন ১০ মিনিট পরপর ছাড়ে। নিধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সময়ও বেঁধে দেয়া হয়। যে কারণে তাদের বেপরোয়া গতিতে ছুটতে হয়।
এই বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের বারোবাজার থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম জানান, গড়াই ও রুপসা পরিবহনের দ্রুত গতিতে চলাচলের বিষয়ে তারা অবগত। চালকদের একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে নিয়ন্ত্রনে মধ্যে গাড়ি চালানোর জন্য। আবার মালিকদের বলা হয়েছে। নওয়াপাড়া থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গড়াই ও রপসা পরিবহনের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। প্রতিটি বাস চালকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রনে আসেনি। বাস সিন্ডিকেট সময় বেঁধে দেয়ার কারণে চালকরা ওভার স্পিডে গাড়ি চালান। এটা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।দৈনিক স্পন্দন থেকে

আরো সংবাদ