গণভবন দেশের সবার জন্য উন্মুক্ত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, যে কেউ যেকোনো সময় দেশের কাজ নিয়ে তার কাছে আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভয় বা সংকোচ না করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার কাকরাইলে বাংলাদেশের সুপ্রিম অডিট ইনস্টিটিউটের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, সব সময় সব কাজ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে তিনি ভয় পান। এর জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থসচিব বললেন আমার সঙ্গে কথা বলতে নাকি ভয় পায়। আমি এখন হাসব না, কাঁদব-এটা আমি জানি না। আমি সত্যি খুব দুঃখিত এই কথা শুনে। কারণ আমি মনে করি আমাকে কেউ ভয় পাবে কেন?’
‘জনগণের স্বার্থে বা দেশের স্বার্থে কাজ করতে অর্থ সচিব কেন, আপনারা যে কেউ যেকোনো সময় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, দেখা করতে পারেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি কেবল দেশের প্রধানমন্ত্রী না, আমি জাতির জনকের মেয়ে, আমার সরকারি যে বাসভবন, এটা তৃণমূলের যেকোনো মানুষের জন্য উন্মুক্ত।’
নিরাপত্তার জন্য বিশেষায়িত বাহিনীর কড়াকড়ির কথাও তুলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘একটু অসুবিধা হয়ে যায়, নিরাপত্তার নামে বাধাগ্রস্ত হয়ে যায় সবাই। আবার আমার সঙ্গে কাজ করে যারা, মাঝেমধ্যে তাদেরকে বকাও খেতে হয় আমার কাছ থেকে, কেন আমার কাছে আসতে দিল না, কেন কথা বলতে দিল না ‘
‘কিন্তু তারপরও আমি বলব, দেশের যেকোনো কাজের জন্য যে কেউ যেকোনো সময় আসতে পারেন, এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অন্তত আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এই আশ্বাসটা আমি দিতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজেকে বাংলাদেশের জনগণের একজ সেবক বলে মনে করি, প্রধানমন্ত্রী না। আমার দৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীর পদটা তো একটা সাময়িক পদ। জনগণ ভোট দেয় পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসি। এটাকে আমি কখনও স্থায়ী বন্দোবস্ত মনে করি না।’
‘আমরা অতীতে দেখেছি কেউ একজন উঠলে মনে করত আর নিচে নামা যাবে না বা দূরে যাওয়া যাবে না। কিন্তু সেই চিন্তা না। আমি মনে করি, সাময়িক পদ আমি পেয়েছি, সুযোগ পেয়েছি জনগণের জন্য কাজ করতে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি, নিজের উন্নয়ন না, ব্যক্তিগত স্বার্থে না। দেশের মানুষ ভালো থাকবে সে লক্ষ্য নিয়ে।’
‘জনগণের উন্নতি হওয়া মানেই দেশের উন্নতি। সেটাই আমার নিজের উন্নতি, আমার ব্যক্তিস্বার্থের জন্য না।’
সেনাশাসকদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা যখন বিদেশে যায়, যেমন মিডিল ইস্টের কোনো কান্ট্রিতে গেল বা গাফল কান্ট্রিতে গেল, সেখানে গিয়ে যে শান শওকত দেখে আসে, ওইটাই মাথার মধ্যে ঢুকে যায়। চেয়ারটা কত উঁচু বানাবে, কত ঝলমলে, চকচকে বানাবে, কা্র্পেটটা কত মোটা বাড়াবে, কোন ব্র্যান্ডের স্যুট পরবে, কোন ব্র্যান্ডের ঘড়ি পরবে, কোন ব্র্যান্ডের সানগ্লাস, জুতা পরবে, ওই নিয়ে যতটা চিন্তিত থাকে, দেশের মানুষের কী খাওয়াবে, কী পরবে, কী করবে, সে চিন্তা তাদের মধ্যে থাকে না।’
‘এটুকু বলতে পারি, এটুকু মানসিক রোগ থেকে আমরা কিন্তু মুক্ত। …যখন যেমন, তখন তেমন চলতি পারি। আমার কোনো কিছুর জন্য হা-হুতাশপনা নেই।’
‘আমার দুঃখ এবং হা হুতাশ হয় তখনই যখন দেখি আমার দেশের একটা মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। একটা গরিব মানুষ ভাত পাচ্ছে না বা তার ঘর নাই্ বা তার রোগে চিকিৎসা পাচ্ছে না- সেটাই আমাকে পীড়া দেয়।’
অনুষ্ঠানে সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবহিদিতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা, আধুনিকায়ন করা, কেবল সরকারি ব্যয়ের পরে না, ব্যয় চলাকালে এমনকি আগেই নিরীক্ষা করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের টাকা অপচয় হোক বা দুর্নীতি হোক, সেটা তিনি চান না। আর সেটা তিনি বরদাশও করবেন না।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬.৭ শতাংশ। সেটি ২২ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে এটাকে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চান তিনি।
২০০৫-৬ অর্থবছরে ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা টাকার বাজেট এখন চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মাথাপিছু আয় ১৬১০ ডলার, প্রবৃদ্ধির ৭.২৮ ভাগে উন্নীত করা, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, রপ্তানি, রিজার্ভ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-পানির জন্য হাহাকার দূর, ৯০ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় নিয়ে আসার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।