সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দেশে গুজব ছড়ানো ও গণপিটুনির ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে হাইকোর্টের দেওয়া ৫ দফা নির্দেশনার রায় প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ৭ পৃষ্টার রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের তৎকালীন বেঞ্চ রায়ে স্বাক্ষর করেন। ২০২০ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট ৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করেন হাইকোর্ট। গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনুকে হত্যার প্রেক্ষাপটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় প্রদান করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
আদালতের দেওয়া ৫ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে:
১। পুলিশের প্রত্যেক সার্কেল অফিসার (এএসপি) তার অধীনের প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে ৬ মাসে অন্তত একবার গণপিটুনি প্রবণতার বর্তমান অবস্থা নিয়ে মিটিং করবেন।
২। গণপিটুনির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার প্রচার কার্যক্রম ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণা অব্যাহত রাখবেন।
৩। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনও ধরনের অডিও, ভিডিও, খুদে বার্তা—যা গুজব সৃষ্টি বা গণপিটুনিতে মানুষকে উত্তেজিত করতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যে দুষ্কৃতকারীরা এই কাজে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৪। যখনই গণপিটুনির কোনও ঘটনা ঘটবে কোনও রকম দেরি না করে তখনই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এফআইআর নিতে বাধ্য থাকবে এবং তা সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারকে অবহিত করবেন।
৫। গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনু হত্যার ঘটনা ঢাকার জেলা শিক্ষা অফিসার, উত্তর বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবহেলার ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে পদ্মা সেতু নিয়ে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে টেনে বের করে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। পরে ওই ঘটনায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট গণপিটুনিতে নিহতদের জীবন রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতায় রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গণপিটুনির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান আদালত। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।