চট্টগ্রামে প্রতিনিধি: ঘনিয়ে আসছে কোরবান।দেশ জুড়ে মজুদ আছে পর্যাপ্ত পশু। নগরে পশুরহাট বসানোর প্রস্তুতি আছে সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। এরপরও আছে শঙ্কা। কারণ বাড়ছে করোনার প্রকোপ। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলছে সীমিত পরিসরের লকডাউন। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে তা হবে কঠোর। যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ অবস্থায় আদৌ নগরে কোরবানি পশুর হাট বসবে কিনা সেটা নির্ভর করছে সম্পূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্তের উপর। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সরকার সিদ্ধান্ত দিলে নগরে ছয়টি পশুর হাট বসতে পারে। এর মধ্যে স্থায়ী তিনটি এবং বাকি তিনটি অস্থায়ী বাজার। যদিও নয়টি অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে গত মাসে জেলা প্রশাসনের অনুমতি চেয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। যদিও গতকাল সোমবার পর্যন্ত চসিককে বাজার বসানোর অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন। তবে প্রাথমিকভাবে তিনটির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। দুয়েকদিনের মধ্যে তা দাপ্তরিকভাবে সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়ে দেয়া হতে পারে। জেলা প্রশাসনের অনুমোদন পেলে অস্থায়ী বাজারগুলোতে ইজারাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে সংস্থাটি। স্থায়ী বাজারগুলোতে গত পহেলা বৈশাখ ইজারাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এবার কোরবানির জন্য সম্ভাব্য চাহিদা আছে আট লাখ নয় হাজার পশুর। বিপরীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়েছে সাত লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। এরমধ্যে গবাদিপশু ৫ লক্ষ ১০ হাজার ৪০টি, মহিষ ৬৩ হাজার ১৩৬ টি, ছাগল ও ভেড়া এক লক্ষ ৮৩ হাজার ৬৩টি এবং অন্যান্য ৯৫ টি। স্থানীয় উৎপাদনের সঙ্গে বাইরের জেলাগুলো থেকে আসা গরু যোগ হবে। ফলে চট্টগ্রামে গরুর সংকট হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, সব প্রস্ততি সম্পন্ন করেছি। মন্ত্রণালয়েও আমরা তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছি। চট্টগ্রামে এবার কোরবানি পশুর সংকট হবে না।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পশুর হাট বসাতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি চেয়ে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। এখনো তার জবাব পাইনি। তবে আমাদের প্রস্ততি আছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে সভাও হয়েছে। বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেখানে। যেমন প্রতিটি বাজারে প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা আলাদা পথ থাকতে হবে। সে আলোকেই সবকিছুৃ করব। এখন জেলা প্রশাসনের অনুমোদন পেলে অস্থায়ী বাজারগুলোতে ইজারাদার নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবো।
জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার মো. ওমর ফারুক বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে তিনটি বাজার বসানোর অনুমতি দেয়া হবে। কাল (আজ) ফাইল অনুমোদন হবে। তবে শেষ পর্যন্ত পশুর হাট বসবে কিনা সেটা নির্ভর করবে সরকারি সিদ্ধান্তের উপর। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গতবার নগরে কোরবানি পশুর হাট বসেছিল সাতটি। এবার ১২টি হাট বসানোর পরিকল্পনা ছিল সংস্থাটির। এর মধ্যে তিনটি স্থায়ী হাট হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর বাজার ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অবশিষ্ট নয়টি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে গত ৩০ মে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছিল চসিকের রাজস্ব বিভাগ। অনুমতি চাওয়া অস্থায়ী বাজারগুলো হচ্ছে- কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার, স্টিল মিল বাজার, পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ (কাটগড়), ৪১নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, আমান বাজার ওয়াসা মাঠ, মাদারবাড়ী রেলক্রসিং সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কালুরঘাট ব্রিজের উত্তর পার্শ্বের মাঠের খালি জায়গা।
এদিকে করোনার প্রকোপ বাড়লেও শেষ পর্যন্ত পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। গত ১৩ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ভার্চুয়ালি কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাইকরণ এবং কোরবানির বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা হয়েছিল। ওই সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আসন্ন ঈদুল আজহায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসবে। এর বাইরে পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না। ‘করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় দেশটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় আমাদের দেশেরও কিছু কিছু এলাকায় বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় এ ভেরিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। তাই এ বছর সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেই পশুর হাট বসানো হবে।’
প্রসঙ্গত, চাঁদ দেখা স্বাপেক্ষে আগামী ২১ অথবা ২২ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছর ১ থেকে ১০ জিলহজ্ব পবিত্র কোরবানির পশুর হাট বসে নগরে। ওই হিসেবে এবার আগামী ১২ অথবা ১৩ জুলাই থেকে পশুর হাট শুরু হওয়ার কথা।