আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:২৫

চট্টগ্রামে হাসপাতালে হাঁটু পানি

 

ডেস্ক রিপোর্ট।।   টানা বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ এলাকার মা ও শিশু হাসপাতাল ডুবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়েছে।

টানা বৃষ্টির কারণে সকাল থেকেই আগ্রাবাদের এ হাসপাতালে পানি উঠে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েন রোগী ও তাদের সাথে আসা লোকজন।

বিপাকে পড়তে হয়েছে হাসপাতালটির চিকিৎসক, সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকেই আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পুরো নিচতলায় পানি ওঠে। এতে সেখানকার বিভিন্ন সাধারণ বিভাগ, শিশু বিভাগ, অভ্যর্থনা কক্ষসহ সব কিছুই হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকেই আমরা পানিতে তলিয়ে গেছি। জোয়ার এবং টানা বর্ষণের কারণে নিচতলায় হাঁটু পানি জমে গেছে।
হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষ, পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ, হাসপাতালের আউটডোর, সাধারণ হিসাব বিভাগ, শিশু বিভাগের বিভিন্ন কক্ষে পানি প্রবেশ করেছে।

ডা. নুরুল হক বলেন, “পানি জমে গেলেও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম আমরা বন্ধ হতে দিইনি। রোগী এবং তাদের সাথে আসা লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।”

বিকালের পর থেকে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করে বলেও জানান তিনি।

আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে সাধারণ রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি চলমান করোনাভাইরাসের জন্য বিশেষ ইউনিট করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মহানগরীতে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে করে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকাতেও পানি উঠেছে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি নামতে শুরু করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের হিসেবে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৪৯ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাদ তঞ্চঙ্গা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত থেমে থেমে হতে পারে।

এছাড়া সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল আছে বলেও জানান তিনি।

বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে হাসপাতাল ছাড়াও নগরীর নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সোমবার সকালে নগরীর বাকলিয়া, প্রবর্তক মোড়, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, হালিশহর, সরাইপাড়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, ডিসি রোড, কাপাসগোলা, চাক্তাই, আছাদগঞ্জ, খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন নিচু এলাকায় পানি জমে থাকার খবর পাওয়া গেছে।

পানি জমে থাকায় এসব এলাকায় রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পুসহ ছোট যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হয়।

চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী  বলেন, নগরীতে জলাবদ্ধতা আগের তুলনায় কম।

তিনি বলেন, আগে যেসব এলাকায় বেশি জলাবদ্ধতা হত সেখানে এখন পানি কম জমছে। সোমবার সকালে বৃষ্টির সময় জোয়ার থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি বেশি জমেছে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি নেমে গেছে।

 

এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে ধসের আশঙ্কায় নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরিয়ে নিতে মাইকিং করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তাদের জন্য নগরীতে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

নগরীর মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, একে খান পাহাড়, ট্যাংকির পাহাড়, আমিন জুট মিলস এলাকা, রউফাবাদ, খুলশী, পাহাড়তলি, ফয়’সলেক, আকবর শাহ, ঝিল-১,২,৩ নম্বর এলাকা, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনী এলাকা, ফিরোজ শাহ, ফরেস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক রোড এলাকায় মাইকিং করা হয় বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল বলেন, ১৭টি পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরাতে মাইকিং করা হচ্ছে। পাহাড়ের নিচের বসতি থেকে সরতে বলা হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে তাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হবে।
“জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে আমরা ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি। সামাজিক দূরত্ব মেনে লোকজনকে রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।”

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হল- পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বিশ্ব কলোনিতে কোয়াড-পি ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফিরোজ শাহ কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বায়তুল ফালাহ আদর্শ মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

জালালাবাদ বাজার সংলগ্ন শেড, রউফাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, রশিদিয়া রউফাবাদ আলিম মাদ্রাসা, মহানগর পাবলিক স্কুল, আল হেরা মাদ্রাসা, আমিন জুটমিল ওয়ার্কার্স ক্লাব, আমিন জুট মিলস নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবাদউল্লাহ পণ্ডিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদনগর সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, কলিম উল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াইডব্লিউসিএ, শেখ রাসেল প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মতিঝর্ণা ইউসেফ স্কুল।

তথ্যসুত্র: বিডি নিউজ ২৪

আরো সংবাদ