আজ - বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - বিকাল ৪:১১

চৌগাছায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা

চৌগাছায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ভিনদেশি ফল ড্রাগন।
স্থানীয় উদ্যোক্তা ইসমাইল হোসেন প্রথমে ড্রাগন চাষ করে সফলতা অর্জন করেন। তার সফলতা দেখে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ইতোমধ্যে দশ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

উপজেলার তিলকপুর গ্রামের একছের আলীর ছেলে ইসমাইল। ছোট থেকেই তার ইচ্ছা কৃষিভিত্তিক ব্যতিক্রমী কিছু করা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি নেন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে এই তরুণ থাই পেয়ারা, আপেল ও বাউ কুলের বাগান করেন। নতুন কিছু করার চিন্তায় ইন্টারনেটে ড্রাগন চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি।

ইসমাইল জানান, ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারা এনে নিজের দুই বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন। বর্তমানে দশ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ রয়েছে তার। প্রতি একর বাগান থেকে প্রথম পর্যায়ে বছরে ৬-৭ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করা সম্ভব। এছাড়া চারা বিক্রি করে আরো কয়েক লাখ টাকা আয় করা যায়।

চাষিরা জানান, প্রতি বছরই এই গাছ বড় হয় এবং ফলনও বাড়ে। একটানা বছরের সাত মাস এই ফল পাওয়া যায়। একবার চারা লাগালে ৩০ থেকে ৪০ বছর একইভাবে ফল হয়। ফলে বিপুল লাভ করা সম্ভব।

উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বুন্দলিতলা গ্রামের চাষি সোলাইমান হোসেন জানান, প্রথম পর্যায়ে এই বাগানে এতো টাকা বিনিয়োগ করে ড্রাগন চাষ করা ‘স্বপ্নে দেখা কল্পকাহিনি’র মতো মনে হতো। তারপরেও ড্রাগন বাগান তৈরি করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে নিজের ভুষি মালের ব্যবসা বন্ধ করে প্রথমে এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন।
তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বাগানের দেড় বছর বয়সে তিনি চারা ও ড্রাগন ফল বিক্রি করে চার লাখেরও বেশি টাকা আয় করেছেন। প্রতি কেজি ড্রাগন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। ভালা লাভ হওয়ায় তিনি এ বছর আরো এক বিঘা জমিতে নতুন বাগান করেছেন।

সোলাইমান আরো জানান, ড্রাগনের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে পেয়ারা চাষ রয়েছে; যেখান থেকে ড্রাগন বাগান পরিচর্যার খরচ উঠে আসে। বরং কিছু টাকা লাভ থাকে।
সিংহঝুলী গ্রামের প্রবাসফেরত মিঠু খান বলেন, ‘বি‌দেশ থে‌কে বা‌ড়ি এসে কী কর‌বো চিন্তা কর‌ছিলাম। ওই সময় ড্রাগন চা‌ষের কথা মাথায় আসে। বাজারে ড্রাগন ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যে কারণে নয় বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগান করেছি। বাগানের বয়স এক বছর হয়েছে। গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। অল্প কিছু ড্রাগন ফল ৩-৪শ টাকা কেজি দরে বিক্রিও করেছি।’

চাষিরা জানান, ভেষজ জাতীয় এ ফল চাষ অত্যন্ত লাভজনক। এই ফল চাষ করার জন্য জৈব সারই যথেষ্ট। কীটনাশকেরও প্রয়োজন হয় না। এছাড়া বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খরিদ্দাররা বাগানে এসে কিনে নিয়ে যান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দীন বলেন, চৌগাছা এলাকা ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলায় প্রায় দশ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে। জমি থেকে ড্রাগন ফল সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করেছেন চাষিরা। মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের নানা পুষ্টিগুণে ভরা ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক। সেই কারণে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করার জন্য চাষিদের উৎসাহ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত