গত এক সপ্তাহ উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের রানিয়ালি গ্রামে অর্ধশতাধিক নারী-পুরম্নষ অদৃশ্য কথিত জিনসাপে দশংনে অসুস্থ হয়েছেন। শুধুমাত্র গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে একই গ্রামে ১২জন মহিলা ঐ সাপের কামড়ে অসুস্থ্য হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন,‘ অসুস্থ সকলে ম্যাসহিস্ট্রিরিয় ইন্সেক বাউট রোগে আক্রাšত্ম হয়েছেন।’
এদিকে এই অদৃশ্য বিষধর সাপে দংশনে গত ১জুলাই ঐ গ্রামের আব্দুল হকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৪০) মারা গিয়েছেন বলে হাসপাতালে অসুস্থ্যরা জানিয়েছেন। এ সময় কবিরাজ গ্রামবাসিকে জানান, রাবেয়াকে জিন সাপে দংশন করেছে। যে কারণে চিকিৎসা দেয়ার পরও তাকে বাঁচানো গেল না। এরপর গ্রামে কথিত অদৃশ্য জিনসাপ আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়ে।
অপরদিকে, সোমবার দুপুরে কথিত জিনসাপে দংশনে একই গ্রামের মহিলা-পুরম্নষসহ ১২জন অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। পরে তাদেরকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তারা হলেন, উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের রানিয়ালি গ্রামে খাইরম্নজ্জামানের স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম(৪৫), তাহাজ্জুলের স্ত্রী রিতনা বেগম (৪০), ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সুফল মন্ডলের মেয়ে পলস্নবী মন্ডল(১২), নারায়ণ চন্দ্র(৪৫), শরজিৎ মন্ডলের মেয়ে তমা মন্ডল(১৫), কোমর মন্ডলের মেয়ে অনিতা মন্ডল(২০), গৌতম মন্ডলের স্ত্রী রমা মন্ডল(২৫), মেয়ে রম্ননা(১২), প্রসেনজিৎ মন্ডলের মেয়ে মৌসুমি মন্ডল (২০), সুফল মন্ডলের মেয়ে কেয়া মন্ডল(১৬), রফিকুল ইসলামের মেয়ে বৃষ্টি(২০), মিটুন মন্ডলের মেয়ে প্রাšিত্মক মন্ডল(২৭) সহ গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরম্নষ কথিত জিনসাপের দংশনের পরে গ্রাম্য চিকিৎসকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে অসুস্থ বৃষ্টি বলেন, সোমবার দুপুরে রান্না ঘরে রান্না করছিলাম। এসময় হঠাৎ করে শরীরে ঝিমঝিম করে মাথাঘোরার মতো হলো। পরে শরীরে জ্বালা-পোড়া শুরম্ন হয়। বৃষ্টি স্বজনদের ঘটনা জানালে তাকে প্রথমে গ্রামের এক মহিলা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সে হাত চালান দিয়ে দেখতে পান তার শরীরে বিষ রয়েছে। পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপর অসুস্থ গৌরচন্দ্র মন্ডল জানায়, আমি মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম। এসময় হঠাৎই মনে হলো আমার পায়ে কিসে কামড় দিয়েছে। এর পরে আমার শরীরের মধ্যে জালা পোড়া শুরম্ন হয়। আমি কালিয়াকুন্ডি গ্রামের কবিরাজ মুজিদ মেম্বরের কাছে যায়। হাত চালান দিয়ে দেখে আমার শরীরে বিষ রয়েছে। সেখান থেকেই চিকিৎসা নিয়ে বিষ মুক্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি। এভাবে বিভিন্ন ভাবে গ্রামের মহিলারা পর্যায়ক্রমে অসুস্থ্য হতে থাকেন।
গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ও গ্রাম্য চিকিৎসক রিজাউল ইসলাম বলেন, ‘জিনসাপের আতঙ্কে গ্রামের মানুষ রাতে ঘুমাতেও পারছেনা। কখন কার দংশন করে কে জানে! সবায় এখন এই আতঙ্কে রয়েছি। আমার বাড়িতে তিনজনকে এই সাপে দংশন করেছে। তাদেরকেও যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তিনি আরো বলেন, গ্রামের লোকজন মিলে উপজেলার আড়াদাহ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক হুজুরের কাছে গিয়ে ছিলাম। তিনিও জানিয়েছেন এটা জিন সাপের কাজ। গ্রাম বন্ধ করতে হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কবিরাজ আব্দুল মজিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তো কারো চিকিৎসা দিতে যাচ্ছি না। সবাই আমার কাছে আসছে। আমিই রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার আবু হায়দার মোহাম্মাদ মনিরম্নজ্জামান বলেন, কোন রোগীকে সাপে কামড় দেয়নি। সকলে মানুষিক আতঙ্কে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। মেডিকেল ভাষায় এই রোগটাকে বলা হয়‘ ম্যাসহিস্ট্রিরিয় ইন্সেক বাউট’। এটি মুলত মানুষের নিউরো হরমোন ও মানসিক দ্বন্দ্বের কারণে হয়ে থাকে। এছাড়া হিস্টিরিয়া রোগের পেছনে আরও কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে, মানসিক চাপ ও দুশ্চিšত্মা, শারীরিক অলসতা, ভয়, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা, ম¯িত্মস্কের সমন্বয়হীনতা, অন্যতম কারণ। এই রোগে মানুষ অসুস্থ্য হলে,প্রতমে শরীর ঝিন-ঝিন করে, শরীরে অতিমাত্রা বেড়ে যায়, স্পর্শনীয় অনুভূতি বুঝতে না পা। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। অস্বাভাবিক ভাবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ও বুকের ধরফরানি হওয়া লড়্গন দেখা যায়।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারম্নন অর রশিদ জানান, সাপে কাটার নামে চৌগাছার থেকে ১১জন নারী-পুরম্নষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদেরকে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। তিনি বলেন, রোগীরা সকলেই সুস্থ আছেন। তাদের শরীরে সাপে কাটার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তারা সকলেই সাপ আতঙ্কে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে।