আজ - সোমবার, ৩১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (বসন্তকাল), সময় - সকাল ৮:০৬

জমির ভাগ না পাওয়ায় বাবার কবর দিতে ছেলেদের বাধা।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটাগ্রামে সম্পত্তির ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। বাবার মৃত্যুর পর তার লাশ উঠানে ফেলে রেখে জমি ভাগাভাগি নিয়ে সন্তানদের মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় ১৬ ঘণ্টা পর লাশ দাফন করা হয়।

বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান হবি বিশ্বাস (৭০)। কিন্তু পারিবারিক সম্পত্তির বিরোধের জেরে তার জানাজা ও দাফন নিয়ে সৃষ্ট হয় জটিলতা। জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের চার স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। মৃত্যুর আগে তিনি ছোট স্ত্রী ও তার ছেলে সোহেল বিশ্বাসের নামে ৮৩ শতক জমি লিখে দেন, যা মেনে নিতে পারেনি অন্য ছেলেরা।

বাবার মৃত্যুর খবর শুনে অন্য ছেলেরা—আতাউর, সুমন, আনোয়ার ও হাফিজুর কবর খোঁড়ার কাজে বাধা দেন। দীর্ঘ সময় ধরে উত্তেজনা চলতে থাকে, ফলে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও দাফনের ব্যবস্থা করা যায়নি। পরে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্যোগে সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে সমঝোতা হয় যে, ৮৩ শতকের মধ্যে ৫০ শতক জমি অন্যান্য ছেলেদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। এরপরই বাবার লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে সোহেল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা দাফনের চেষ্টা করি, কিন্তু আমার সৎ ভাইয়েরা বাধা দেয়। পরে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ৫০ শতক জমি তাদের লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তারা দাফনের অনুমতি দেয়।’’

সালিশ বৈঠকে উপস্থিত সাবেক ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘‘জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। আমরা মীমাংসা করে দিয়েছি এবং অবশেষে রাত ১০টায় মরহুম হাবিবুর রহমানকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’’

এ বিষয়ে চলিশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। অবশেষে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্যোগে সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।’’

এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব যে কতটা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে, তা আবারও প্রমাণ হয়েছে।

আরো সংবাদ