পাইলট সাব্বিরসহ বাকিরা রিমান্ডে
খানজাহান আলী নিউজ ডেস্ক: টার্গেট ছিল গণভবন। বিমানের এয়ারক্রাফট নিয়ে সরাসরি গণভবনে আঘাত করার মতো ভয়ঙ্কর ছক তৈরি করে কাজ করছিল নব্য জেএমবির জঙ্গিরা।
হামলা বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে তারা কয়েক দফায় রেকিও সম্পন্ন করে। নব্য জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি নিহত সারোয়ার জাহান ওরফে ফরহাদ, আবদুল্লাহ এবং গ্রেফতার পাইলট সাব্বির এনামসহ শীর্ষ জঙ্গিরা প্রায়ই এ নিয়ে বৈঠক করতেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন দারুস সালাম থানায় ৮ সেপ্টেম্বর দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার মো. বিল্লাল হোসেন। অন্যদিকে বিল্লালের দেওয়া তথ্যের বিষয়টি উল্লেখ করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পাইলট সাব্বিরসহ গ্রেফতার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছেন। পরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের আদালত সাব্বিরকে সাত দিন, সুলতানা পারভীনকে পাঁচ দিন ও বাকি দুজনকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার সম্রাট মিয়া এবং শাহাদাত হোসেন ওরফে আমির হামজাকেও এই মামলায় ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে র্যাব। সূত্র বলছে, জঙ্গি সম্পৃক্ততায় বাংলাদেশ বিমানের পাইলটের নাম আসায় প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মচারী উদ্বিগ্ন। অফিসের সহকর্মী হওয়ার কারণে অনেকের সঙ্গে পাইলট সাব্বির এনামের সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময় কথোপকথন ঘিরেই তাদের যত আতঙ্ক। তবে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পরই তারা সাব্বিরকে গ্রেফতার করেছেন।
বাংলাদেশ বিমান কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কেউ উগ্রপন্থা বা নাশকতার চেষ্টায় জড়িত থাকলে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের পরই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে অনেকেই সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। আদালত সূত্র বলছে, ৩০ অক্টোবর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিহত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিল্লাল বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ ভাই যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেই ফ্ল্যাটে বাড়ির মালিক আজাদ ও তার স্ত্রী আসতেন। মাঝে মাঝেই তারা ছাদে গিয়ে গল্প করতেন। আবদুল্লাহ ভাইও মাঝে মাঝে বাড়ির মালিকের বাসায় যাতায়াত করতেন। আজাদের স্ত্রী একবার কামালের মাধ্যমে সংগঠনের জন্য ৩০ হাজার টাকা আবদুল্লাহ ভাইকে দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ ভাই আমাকে বলেছিলেন, আজাদ সাহেবের স্ত্রী সংগঠনের খরচের জন্য তাকে প্রতি মাসে টাকা দিতেন। আজাদ সাহেবের মেয়ে স্নিগ্ধাও মাঝেমধ্যে আবদুল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। তিনি আবদুল্লাহ ভাইয়ের সবকিছু জানতেন। আজাদের স্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে আসিফও প্রায় সময় আবদুল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। আবদুল্লাহর সঙ্গে আসিফের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আসিফ একবার একটি নাইনএমএম পিস্তল তার এক বন্ধুর কাছ থেকে বিক্রির জন্য এনে আবদুল্লাহ ভাইকে দিয়েছিলেন। ওই পিস্তলটির দাম ৭০ হাজার টাকা। ’ জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ ভাই, সারোয়ার জাহান ওরফে ফরহাদ এবং সাব্বিরসহ আরও অনেকে পরিকল্পনা করেন, বিমান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হামলা চালাবেন। নইলে যাত্রীসহ বিমান সিরিয়াতে নিয়ে যাবেন। অল্প সময়ের মধ্যে সাব্বিরের তার অফিস থেকে ১০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। ওই টাকার পুরোটাই তিনি সংগঠনের কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ’ ২৬ অক্টোবর নিহত আবদুল্লাহর সহযোগী বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাইলট সাব্বিরসহ চারজনকে সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার মধ্যে গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাব বলছে, চারজনই দারুস সালামের ‘কমল প্রভা’ নামক বাড়িতে আত্মঘাতী জেএমবি সদস্য আবদুল্লাহর সহযোগী। গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদের ছেলে পাইলট সাব্বির, আজাদের স্ত্রী সুলতানা পারভীন, সুলতানার ভাইয়ের ছেলে আসিফুর রহমান আসিফ এবং নিহত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী চা-দোকানি আলম। চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘গ্রেফতারদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা করছি আমরা। ’ র্যাব জানিয়েছে, সাব্বির ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি থেকে উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। তিনি স্পেন ও তুরস্ক থেকেও বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রিজেন্ট এয়ারওয়েজে চাকরি করেন তিনি। ওই বছরই তিনি বাংলাদেশ বিমানে পাইলটের চাকরি নেন। বিমানের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে সাব্বির বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ চালাতেন। ৩০ অক্টোবর তিনি ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেন। প্রসঙ্গত, চলতি বছর ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুর মাজার রোডের বর্ধনবাড়ী এলাকায় ‘কমল প্রভা’ নামের বাড়িতে অভিযান চালায় র?্যাব। অভিযান চলার সময় ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণ হয়। এতে আবদুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগী আত্মাহুতি দেন।