ডেস্ক রিপোর্ট।। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ’৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ২১ বছর পর আমরা ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
শুক্রবার বিকালে টুঙ্গিপাড়ায় হোয়াইট হাউসে আওয়ামী লীগের যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর শুরু হল।
যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের জন্য আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও উদ্যোগ নিয়েছে। মুজিববর্ষ ঘিরে মানুষের উৎসাহ যে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে হত্যাকারীরা তার নাম মুছে দিয়েছিল। আজ সেই নামটি আবার উচ্চারিত হচ্ছে। জাতির পিতার নাম আর কখনও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। কারণ জাতির পিতা সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। এ দেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য তিনি কাজ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ, দুই লাখ মা-বোন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের আত্মত্যাগকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে। আপনারা জানেন, এরই মধ্যে দেশের দারিদ্র্যহার ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মনে করি, আজ যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি অর্থনৈতিকভাবে এবং সেই সব অর্জনের সুফল একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ যেন পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দলের প্রতিটা নেতাকর্মীকেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব- এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।
জাতির পিতার সমাধিতে দলের কয়েকজন নেতার আসতে না পারার প্রসঙ্গ টেনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকায় সিটি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় যারা টুঙ্গিপাড়ায় আসতে পারেননি তাদেরকে পরে নিয়ে আসা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হোয়াইট হাউস থেকে বের হয়ে হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন।
এর আগে বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
শেখ হাসিনা এ সময় জাতির পিতার সমাধির পাশে বসে কোরআন তেলাওয়াত করেন। টুঙ্গিপাড়া এলে প্রতিবারই তিনি সমাধিসৌধের পাশে বসে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করেন।
বেলা ১টায় জাতির পিতার সমাধিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দলীয় সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহত সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এ সময় সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করে। জুমার নামাজের পর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথসভা শুরু হয়।
ফেরিভাড়া দিয়ে নদী পার কেন্দ্রীয় নেতাদের : সাধারণ যাত্রীদের মতোই ফেরিভাড়া দিয়ে নদী পার হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বহনকারী ৬টি গাড়ি।
আওয়ামী লীগে দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, মাওয়ার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাট পারাপারের সময় নেতাদের বহনকারী প্রতিটি বাসের জন্য ২ হাজার ১০ টাকা করে পরিশোধ করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণ থেকে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন নেতারা। বাসে সড়কপথে শুক্রবার রাতেই আবার ঢাকায় ফেরেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।