বিশেষ প্রতিনিধি যশোর : যশোরে সম্প্রতি মিলেছে একটি অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান। কারিগরের দাবি তিনি অস্ত্র তৈরি করেন পুলিশের জন্য। এবং নাম মাত্র মূল্যেই তা বিক্রয় করেন পুলিশ সদস্যদের কাছে।গেল (১৬ জানুয়ারি) বুধবার যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামশেদুল আলমের ভ্রাম্যমাণ আদালতে কামরুল ইসলাম নামে কারিগর এই দাবি করেন।তবে পুলিশের দাবি কামরুল মনগড়া কথা বলছে।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কারিগর কামরুল ভ্রাম্যমাণ আদালতে জবানবন্দি দেন,বলেন এ আগ্নেয়াস্ত্রগুলো আমি তৈরি করি পুলিশের জন্য। চার-পাঁচ মাস আগে তৈরি করা অস্ত্র ও গুলি আমার কাছ থেকে নেন এসআই জামাল হোসেনসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা। আমার তৈরি অস্ত্রগুলো কোনো ক্ষতি করে না। পুলিশ মামলার আলামত হিসেবে আমাকে দিয়ে এসব তৈরি করায়। প্রতিটি অস্ত্র আমি গুলিসহ পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করি। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিনও কামরুলের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। এস আই জামাল বলেন, কামরুলকে আমি একটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স ও মাদকসেবী হিসেবে জানতাম। আমি তাকে কখনও আমার দপ্তরে ঢুকতে দিইনি। তার দাবি মনগড়া।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্নকথা, ২০১৫ সালে যশোরের হুদোর মোড়ে গণপিটুনি নাটক সাজিয়ে যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইসমাইল শেখ ও তাঁর বন্ধু আল-আমিন কে হত্যা করে জোড়া খুনের মামলার আসামি হন এসআই জামাল সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা। সেখানেও পুলিশের সুরোতহাল রিপোর্টে একটি অস্ত্র উদ্ধার দেখানো হয়েছিলো। কিন্তু নিহত দু যুবকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পার্টস এসব কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। যশোরের হুদোর মোড়ে যে স্থানে গণপিটুনির কথা উল্লেখ করে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেছিলো, সেখানকার কোন বাসিন্দা বা জনপ্রতিনিধি গণপিটুনি সম্পর্কে কিছুই জানেনা।বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন তথ্য উঠে আসলে নিহত ইসমাইলের বাবা ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসআই জামাল উদ্দিন কে প্রধান আসামি করে এসআই আবদুর রহিম হাওলাদার, এএসআই শহিদুল ইসলাম, এএসআই রাকিবুল ইসলাম ও এএসআই জসিম উদ্দিনের নামে একটি জোড়া খুনের মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়াও বাঘারপাড়ার চাপাতলা গ্রামের বরুণ কুমার তরফদারকে ওই মামলায় আসামি করা হয়।মামলার অভিযোগে বলা হয় বরুণ কুমার পুলিশকে ব্যবহার করে এ দুজনকে অপহরণের পর হত্যা করে গণপিটুনিতে নিহত বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য ইসমাইল শেখ ও তাঁর বন্ধু আল-আমিন কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জড়িত ছিলো না, তাদের বিরূদ্ধে নিজ এলাকা বা থানায় কোন অভিযোগ ছিলো না। সাদাসিদে প্রকৃতির দু যুবক কে হত্যা করে ব্যাপক সমালোচনায়ও পড়েন জামাল।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাস আলীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। শিকদার আক্কাস আলী মামলার তদন্তে কোনকিছু পাওয়া যায়নি তবে ভবিষৎএ কোন সূত্র পাওয়া গেলে পুণরায় তদন্ত করে দেখা যেতে পারে মর্মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলো। পরবর্তীতে মামলার বাদী এক স্থানীয় নেতার প্রভাবে না-রাজি পিটিশন দিতে ব্যর্থ হয়ে মামলাটি স্থগিত রেখেছেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত গেল ১৬ জানুয়ারি বুধবার যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামশেদুল আলমের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদকবিরোধী অভিযানে ভাতুড়িয়া গ্রামের দাড়িপাড়ায় গেলে এই অস্ত্রকারখানার সন্ধান মেলে।এ সময় কারিগর কামরুল, তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও আবুল বাসার নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয় “সেখান থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, একটি খেলনা পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, একটি গুলি, পাঁচটি কাটা গুলি, অস্ত্র তৈরি ডাইস ও ইস্পাত খণ্ড ও শুটারগানের একটি নল উদ্ধার করা হয়।এ সময় কামরুল, তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও আবুল বাসার নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয় জানিয়ে জামশেদুল বলেন, “সেখান থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, একটি খেলনা পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, একটি গুলি, পাঁচটি কাটা গুলি, অস্ত্র তৈরি ডাইস ও ইস্পাত খণ্ড ও শুটারগানের একটি নল উদ্ধার করা হয়।ভ্রাম্যমাণ আদালতে শুনানি শেষে কামরুলসহ আটককৃতদের থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং আটককৃতর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হবে। অভিযানে মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়নি বলে এ বিষয়ে মামলা হবে না বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট জামশেদুল আলম ।যশোর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এএসআই বদরুল হাসানও ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে ছিলেন।
বহুল আলোচিত যশোরে জোড়াখুনের প্রধান আসামি এসআই জামাল হোসেন বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে রিজার্ভ অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে নিহত ইসমাইলের ভাই সালাহ্উদ্দীন সাগর বলেন, আমি স্বরাষ্ট্র ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিবো, প্রধানমন্ত্রী বিচার করবেন আশ্বাস দিলে মামলা পুণরায় চালু করবো। যদি তাঁদের পক্ষথেকে কোন সিদ্ধান্ত না আসে তবে সশরীরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবো। দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ভাই হত্যার বিচার করবোই ইনশাল্লাহ্।