আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১০:৩৬

দজ্জাল পাপিয়ার লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা!

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের সবচেয়ে আলোচিত নাম এখন শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। রাজনীতির আড়ালে মাদক ও নারী বাণিজ্য করেন তিনি। রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আয়োজন করতেন পার্টির। সাপ্লাই দিতেন নারী। এসকর্ট সার্ভিস। সুন্দরী তরুণীদের চাকরি দেয়ার নামে নরসিংদী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসতেন। তারপর তাদের জিম্মি করে দিনের পর দিন করাতেন দেহ ব্যবসা।

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাাদক পাপিয়ার আমলনামা প্রকাশের পর সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে। এবার পাপিয়ার কাছে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ৩ ভুক্তভোগী।

এদের সকলকে নরসিংদীতে আটকে রেখে নির্যাতন করে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে পাপিয়ার বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে বিমানবন্দর থানায় গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান তারা।

এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার বস টিটু মিয়া, উনার সঙ্গে গেছি। উনি টাকা পাবে ঐখানে, যাওয়ার পর তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ব্লক করে দেয়। নারী পাচারসহ অনেক কিছু বলে তাকে, যাতে নড়ার মত কোন শক্তি নাই। এটা বলার মত কোন কাহিনী! যা এই বয়সে আমি দেখি নাই।

আরেক ভুক্তভোগী জানান, এই পাপিয়া চারজনকে আটকে টর্চার করে বলে, টাকা দিবি ১০ লাখ। সঙ্গে সাব্বির ছিলো, আর সুমন পরে আসছে। পরে, ২ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা আমি ব্যাংকের মাধ্যমে দিয়েছি।

এছাড়া আরও ভুক্তভোগী বলেন, এক শনিবার দিন বিকেলবেলা ছাদের ওপর নিয়ে মাইর কাকে বলে। ওরা কি জানি খাইয়া লয়, তারপর মারা শুরু করে। মারসে বেশি সাব্বির, সে জঘন্য মারা মারসে, আর ওই মহিলার ব্যাপরে কি বলমু। ওই মহিলারে আমাদের কাছে দজ্জাল মহিলা লাগে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ ৪ জনকে আটক করে র‌্যাব-১।

আটক অন্যরা হলেন- পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।

যাদের অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও পাপিয়ার কাছে!

জানা গেছে, শুধু গত এক মাসেই এই নারী রাজধানীর অভিজাত এক পাঁচ তারকা হোটেলে বিশাল অঙ্কের বিল পরিশোধ করেছেন। আর এ অর্থ খরচের কারণেই গোয়েন্দাদের চোখ পড়ে পাপিয়ার ওপর। একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে তার সব অপকর্মের কাহিনি। গ্রেপ্তার করা হয় স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন, সাবিক্ষর খন্দকার (২৯), শেখ তায়্যিবাসহ (২২) আরও দুজনকে।

শুরুতে পাপিয়া প্রথমে নিজের দাপুটে অবস্থানের পরিচয় দেন। তবে কোনো কিছুতে গুরুত্ব না দিয়ে পাপিয়ার কাছ থেকে র‌্যাব কর্মকর্তারা উদ্ধার করতে থাকেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

তথ্য মতে, নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদেরকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করতেন পাপিয়া।

এরইমধ্যে পাপিয়ার কাছ থেকে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত অনেক ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

গোপন ক্যামেরায় মেয়েদের ছবি ধারণ করে তাদের নিয়মিতভাবে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়- পাপিয়া বসে আছেন বাইজিবাড়ির সর্দারনির মতো। তার হাতে মোটা একটি বেতের লাঠি। তার কব্জায় থাকা মেয়েরা কথা না শুনলে পেটাতেন। পাপিয়া একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে। এসব হোটেলে বিভিন্ন মেয়েকে পাপিয়া নিজেই নিয়ে যেতেন। তাদেরকে দিয়ে করাতেন অবৈধ দেহব্যবসা। এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছুই কবুল করেছেন পাপিয়া।

পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরী বেশির ভাগ সময় থাইল্যান্ডে অবস্থান করলেও গত থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান করেন। ওই রাতে তার কক্ষেও চার-পাঁচ জন সুন্দরী নারী ছিল বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। পাপিয়ার সব কর্মকান্ডের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী সুমন। একসময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন সুমন। পরে ছিলেন নরসিংদীর প্রয়াত পৌর মেয়র লোকমানের বডিগার্ড।

প্রায় ১০ বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের পর পাপিয়াকে বিয়ে করেন সুমন। লোকমান হত্যাকান্ডের পর বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। মেয়রের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার ৩ বছর পর পাপিয়ার ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই সময় পাপিয়াকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান।

আরো সংবাদ