আজ - বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১০:৫৮

দিবা-রাত্রির টেস্টও ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ

ইন্দোরে প্রথম টেস্টের পর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দিবা-রাত্রির টেস্টেও ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করলো সফরকারী বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ভারতের কাছে ইনিংস ও ৪৬ রানের ব্যবধানে হারলো মোমিনুল হকের দল। ফলে দু’ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিলো টিম ইন্ডিয়া। ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্ট ইনিংস ও ১৩০ রানে জিতেছিলো বিরাট কোহলির দল। ফলে বিশ্বের প্রথম দল হিসেবে টানা চার টেস্ট ইনিংস ব্যবধানে জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়লো ভারত। গোলাপি বলের টেস্টের তৃতীয় দিন খেলার শুরুর ৪৭ মিনিটের মধ্যে দলীয় ১৯৫ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১০৬ ও ভারত ৯ উইকেটে ৩৪৭ রান করে।
দ্বিতীয় দিন শেষেই ম্যাচ জয়ের মঞ্চ সাজিয়ে রাখে ভারত। প্রথম ইনিংসে ২৪১ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে টিম ইন্ডিয়া। সেই চাপ আরও বাড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। ভারতীয় দুই পেসার ইশান্ত শর্মা ও উমেষ যাদবের বোলিং তোপে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। ফলে ইনিংস হারের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেললে দ্বিতীয় দিনই ম্যাচ হারের শংকায় পড়ে যায় টাইগাররা। কিন্তু মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ’র লড়াইয়ে ম্যাচের দৈর্ঘ্য তৃতীয় দিনে নিতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। তবে ইনিংস হার এড়াতে বাকী ৪ উইকেটে আরও ৮৯ রান করতে হতো বাংলাদেশকে।
তৃতীয় দিন ইনিংস হার এড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ৫৯ রান নিয়ে দিন শুরু করেন মুশফিকুর রহিম। দিনের শুরুতে মুশফিকের সঙ্গী হন পেসার এবাদত হোসেন। আগের দিন তাইজুল ইসলামের আউটের পর দিনের খেলার ইতি টানেন অন-ফিল্ড আম্পায়াররা।
দিনের ১০ম বলেই ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন উমেশ। উমেশের বাউন্সারে পরাস্ত হয়ে স্লিপে কোহলিকে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফিরেন এবাদত।
এবাদতের আউটের পর ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন আল-আমিন। দু’জনে একত্রে ছ’টি বাউন্ডারি আদায় করে নেন। এতেও ঘাবড়ে যায়নি ভারতের দুই পেসার ইশান্ত ও উমেশ। দিনের শুরু থেকে এই দু’জনই বল হাতে আক্রমনে ছিলেন।
৪০তম ওভারে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন উইকেটে সেট হয়ে থাকা মুশফিক। উমেশকে উইকেট ছেড়ে মেরে আকাশে বল উঠিয়ে দেন তিনি। কভারে সেটি তালুবন্দি করেন ভারতের জাদেজা। ৭৪ রানে থামেন মুশফিক। ৯৬ বল মোকাবেলা করে ১৩টি চার মারেন মুশি। অষ্টম উইকেটে মুশফিক-আল আমিনের ৩২ রানে দলীয় স্কোর ২শর কোটা পেরিয়ে যাবার সুযোগ হয় বাংলাদেশের।
কিন্তু দলীয় ১৮৪ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকের বিদায় সেটি আর সম্ভবপর হয়নি। কারন ১৯৫ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ২১ রান করা আল-আমিনকে শিকার করে বাংলাদেশের ইনিংসের ইতি টানেন ভারতের উমেশ। সেই সাথে নিজের পাঁচ উইকেটও পূর্ণ করেন তিনি। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত টেস্টে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন উমেশ।
আগের দিন হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আজ আর ব্যাট হাতে নামতে পারেননি। তাই এই ইনিংসে এক ব্যাটসম্যান কম নিয়ে খেলতে হয় বাংলাদেশকে। বল হাতে এই ইনিংস ভারতের উমেশ ৫৩ রানে ৫টি ও ইশান্ত ৫৬ রানে ৪টি উইকেট নেন। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন ভারতের ইশান্ত।
টেস্টের আগে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে ভারতের কাছে ২-১ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।
স্কোর কার্ড (টস-বাংলাদেশ) :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১০৬/১০, ৩০.৩ ওভার (সাদমান ২৯, লিটন ২৪ আহত অবসর, ইশান্ত ৫/২২)।
ভারত প্রথম ইনিংস : ৩৪৭/৯ ডিক্লেয়ার, ৮৯.৪ ওভার, (কোহলি ১৩৬, পূজারা ৫৫, আল-আমিন ৩/৮৫)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : (আগের দিন ১৫২/৬, ৩২.৩ ওভার, মুশফিকুর ৫৯*)।
সাদমান ইসলাম এলবিডব্লু ব ইশান্ত ০
ইমরুল কায়েস ক কোহলি ব ইশান্ত ৫
মোমিনুল হক ক সাহা ব ইশান্ত ০
মোহাম্মদ মিঠুন ক সামি ব উমেশ ৬
মুশফিকুর রহিম ক জাদেজা ব উমেশ ৭৪
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আহত অবসর ৩৯
মেহেদি হাসান মিরাজ ক কোহলি ব ইশান্ত ১৫
তাইজুল ইসলাম ক রাহানে ব উমেশ ১১
এবাদত হোসেন ক কোহলি ব উমেশ ০
আল-আমিন ক সাহা ব উমেশ ২১
আবু জায়েদ অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (বা-৮, লে বা-৯, ও-৫) ২২
মোট (অলআউট, ৪১.১ ওভার) ১৯৫
উইকেট পতন : ১/০ (সাদমান), ২/২ (মোমিনুল), ৩/৯ (মিঠুন), ৪/১৩ (ইমরুল), ৪/৮২* (মাহমুদুল্লাহ আহত অবসর), ৫/১৩৩ (মিরাজ), ৬/১৫২ (তাইজুল), ৭/১৫২ (এবাদত), ৮/১৮৪ (মুশফিক), ৯/১৯৫ (আল-আমিন)।
ভারত বোলিং :
ইশান্ত : ১৩-২-৫৬-৪,
উমেশ : ১৪.১-১-৫৩-৫,
সামি : ৮-০-৪২-০ (ও-৫),
অশ্বিন : ৫-০-১৯-০,
জাদেজা : ১-০-৮-০।
ফল : ভারত ইনিংস ও ৪৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ইশান্ত শর্মা (ভারত)।
সিরিজ সেরা : ইশান্ত শর্মা (ভারত)।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো ভারত।

আরো সংবাদ