আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - বিকাল ৩:৪৬

ননী ফল ঘরের প্রতারক কবীর গ্রেফতার ৩ মাসের কারাদণ্ড

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির আলোচিত প্রতারক ও ভুয়া চিকিৎসক খন্দকার কবীর হোসেনকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এই জেল- জরিমানা করা হয়। ছাতিয়ানতলা মল্লিক পাড়ায় ননী ফল নার্সারির আড়ালে যৌন ও ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতারণা ও অবৈধভাবে ওষুধ তৈরির দায়ে কবীর হোসেনকে এ জেল-জরিমানা করা হয়েছে। এসময় অনুমোদনহীন ওষুধ জব্দ করার পাশাপাশি চেম্বার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।

সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, খন্দকার কবীর হোসেন চিকিৎসক পরিচয়ে সাধারণ মানুষের সাথে দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিলেন। তিনি আসলে চিকিৎসক নন। কবীর হোসেনের চিকিৎসা প্রতারণা নিয়ে দৈনিক স্পন্দনে ধারাবাহিক খবর প্রকাশ হওয়ায় বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে আসে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কয়েকজন লিখিত অভিযোগও করেছেন। চিকিৎসা প্রতারণার এই অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার তার ডেরায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় প্রতারণা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। ফলে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন অনিযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কবীর হোসেনের তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। সিভিল সার্জন আরও জানান, অভিযানের সময় কবীরের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার চেম্বারটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাজা ভোগ করে ফিরে এসেও তিনি চিকিৎসা কার্যক্রম ও ওষুধ তৈরি করতে পারবেন না বলেও নির্দেশনা দেয়া হয়।

ওষুধ প্রশাসন যশোরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কবীর হোসেন পুরোপুরি অবৈধভাবে নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করছিলেন। সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে তিনি সেই ওষুধ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। অবৈধভাবে ওষুধ তৈরি ও বিক্রির প্রমান পাওয়ায় ওষুধ আইনের ১৯৪০ এর ১৮ ও ২৭ ধারা অনুযায়ী ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। কবীরের তৈরি অনুমোদনহীন ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। অভিযানকালে নাজমুল হাসান ছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট সৌম্য চৌধুরী, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ও র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খন্দকার কবীর হোসেনের ডেরায় প্রশাসনের হানা দেয়ার খবর জানতে পেরে উৎসুক জনতা ভিড় করে। এসময় অনেককে বলতে শোনা গেছে “চোরের দশদিন, আর গৃহস্তের একদিন”। অভিযানের কারণে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।

উল্লেখ্য, প্রশাসনের চোখে ধুলো দেয়ার জন্য ধুরন্ধর কবীর হোসেন ননী ফল নার্সারির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে যত সব অপকর্ম করছিলেন। যৌন সমস্যা, চুলকানী, কষা, খিচা ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক, পেটের গন্ডগোল, হজমের সমস্যা, লিভার নষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যান্সারসহ নানা রোগের চিকিৎসা করছিলেন। ব্যবসা জোরদার করতে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে প্রচারণা করা হতো। আবার আন্ডারগ্রাউন্ড টেলিভিশন ও ইউটিওবারদের ম্যানেজ করে পক্ষে সংবাদ প্রচারও করানো হয়। খন্দকার কবীরের জমপেশ প্রতারণা নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তার প্রতারণা প্রকাশ্যে আসে।

আরো সংবাদ