আজ - রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - রাত ৩:১৪

নরসুন্দরের ছেলে যবিপ্রবি তে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারলো না

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারলেন না নিপুণ বিশ্বাস। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ধূসর হয়ে গেল তার। ভর্তি নামের সোনার হরিণ ধরা দিয়েও হারিয়ে গেল তার কাছ থেকে।

গতকাল রোববার বিকেলে ২০২০-২১ সেশনে ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয় যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ। তবে নিপুণ বিশ্বাস এ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে পারেন রোববার রাত সাড়ে ১১টায়।

বিজ্ঞপ্তিতে ভর্তির জন্য বিবেচিত শিক্ষার্থীদের বলা হয়, সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু কী করে সম্ভব? ভর্তি-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিপুণ তখন নীলফামারীর লক্ষীচাপের নিজ বাড়িতে। ওই রাতে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা ধার করে নীলফামারী থেকে যশোরের উদ্দেশে রওনা দেন নিপুণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে তার ১২টা পেরিয়ে যায়।

বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে না পারায় ভর্তি হতে পারেননি নিপুণ। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে।

নিপুণ বিশ্বাসের বাড়ি নীলফামারীর সদর উপজেলা লক্ষীচাপে। তার বাবা প্রেমানন্দ বিশ্বাস পেশায় একজন নাপিত। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় মেধাবী নিপুণ ছোটবেলা থেকে আর্থিক অনটনের শত বাধা পেরিয়ে নীলফামারীর মশিয়ুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে না পেরে পরিবারের কাছে না ফিরে হতাশায় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন ওই শিক্ষার্থী। সন্ধ্যায় তিনি বলেন, রোববার সাড়ে ৫টার দিকে যবিপ্রবির ওয়েবসাইটের নোটিশে ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আমার কোনো স্মার্ট ফোন না থাকায় এ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পারিনি। যবিপ্রবি থেকে আমার মোবাইল নম্বরে ভর্তির জন্য কল বা মেসেজ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটাও দেওয়া হয়নি। মাঝরাতে আমার একজন বড়ভাই আমাকে ফোন করে ভর্তির বিষয় জানালে আমি তাৎক্ষণিক প্রতিবেশী ও স্বজনদের কাছ থেকে ২৩ হাজার টাকা জোগাড় করি। রাতেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসার জন্য ১৫ হাজার টাকায় রিজার্ভে একটি প্রাইভেট মাইক্রোবাসে যবিপ্রবির উদ্দেশ্য রওনা দেই। কিন্তু যশোর থেকে নীলফামারীর দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এবং রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে আমার বেলা ১২টা ৮ মিনিট বেজে যায়।

এরমধ্যে ১০টার দিকে আমার বিষয়ে একজন বড় ভাই ডিন স্যারের সঙ্গে এ সমস্যার বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু আমি আসার পরে জানতে পারি মেরিট লিস্টে আমি প্রথমে থাকার পরেও তৃতীয় সিরিয়ালে থাকা শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এরপর আমি অনেক অনুনয়- বিনয় করলেও তারা আমাকে ভর্তি নেয়নি।

এমনকী বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে গেলেও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি। তিনি আরো বলেন, মধ্যরাতে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এতোগুলো টাকা ধার করে নিয়ে আমার পরিবার ভর্তির জন্য পাঠাল। আমি এখানে এসে ভর্তি হতে পারলাম না। আমি আমার পরিবারকে কী জবাব দেব? যদি সময়সীমা বাড়ানো হতো তাহলে আমি সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারতাম। আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মেসেজও দেওয়া হয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়েটিং লিস্টে থাকায় আমি মেসেজ পেয়েছি, কিন্তু এখানকার প্রশাসন কোনো মেসেজ দেয়নি। আমাকে যদি আগে থেকে মেসেজ দেওয়া হতো অথবা নোটিশের পরের দিনই সময় না দিয়ে একটা দিন পরে দেওয়া হতো তাহলে আমি সঠিক সময়ে এসে ভর্তি হতে পারতাম।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. তানভীর ইসলাম বলেন, রোববার দুপুরে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করায় আমরা ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করি। আমাদের উপাচার্য স্যারের নির্দেশনা ছিল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সকল ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার। এরই প্রেক্ষিতে আমরা ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আজকে আমাদের তিনটি বিভাগসহ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির কাজ ছিল। আমরা সময় বাড়িয়ে বেলা ১২টায় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে আসা একজন শিক্ষার্থী থাকায় আমরা তাকেই ভর্তি করি। নীলফামারী থেকে আসা নিপুণ নামে ওই ছেলেটির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু বলার নেই। নিয়মের মধ্যে থেকেই আমাদের অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে হয়।

এ বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত