যশোর প্রতিনিধি: যশোরের মিঠু শেখ হত্যা মামলায় অবশেষে চার্জশিটভুক্ত আসামি জনি ওরফে কালো জনি ধরা পড়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বের হওয়ার সময় তাকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর তিনি নিজেকে ওই মামলার আসামি নয় বলে দাবি করায় ফের বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় পুলিশকে। দিনভর নাটকীয়তার পর সন্ধ্যায় নিহত মিঠুর পরিবার তাকে প্রকৃত আসামি হিসেবে শনাক্ত করে। পরে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও জনি দাবি করে বলেন, তাকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষের লোকজন মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিদুজ্জামান শহীদ, খোলাভাঙা ৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য তরিকুল সহ অন্যান্যরা।
কোতোয়ালি থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানান, আটকের পর জনি নিজেকে মিঠু শেখ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি নয় দাবি করে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করেন। এ জন্য তিনি নিজের ভোটার আইডি কার্ডের কপি থানায় জমা দেন। সেখানে জনির বাবার নাম লুৎফর রহমান ও মায়ের নাম মমতাজ বেগম বলে উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, এ মামলায় বর্তমানে কারাবন্দি সবুজই প্রকৃত আসামি। এতে পুলিশ ফের বিভ্রান্তিতে পড়ে। ওসি আরও জানান, কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে মামলার বাদী ও নিহত মিঠু শেখের ভাই ইস্রাফিল শেখসহ পরিবারের সদস্যদের থানায় ডেকে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তারা জনিকে আসল আসামি হিসেবে শনাক্ত করেন।
বাদী ইস্রাফিল শেখের সঙ্গে থানায় এসেছিলেন তার মা সায়রা বেগম ও স্ত্রী নাসরিন বেগম। থানা হাজতের সামনে নিতেই সায়রা বেগম চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘ওইতো, কপাল কাটা ওই ছেলেডাই (জনি) আমার মিঠুরে বাড়ি থেকে তুলে আনিছিল। ওইতি আমার ছেলেরে খুন করেছে।’ ইস্রাফিল ও তার স্ত্রীও একই কথা বলেন।
এদিকে মিঠু হত্যার প্রকৃত আসামি জনি গ্রেফতার হওয়ায় এ মামলায় কারাবন্দি নিরপরাধ যুবক সবুজের মুক্তির সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। সবুজের বাবা খাইরুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, তিনি আদালতে সুবিচার পাবেন বলে আশাবাদী। সবুজের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তফা হুমায়ুন কবীর বলেন, আগামী ২২ মে মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারিত রয়েছে। ওইদিনই আদালত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।
২০০৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর খুন হন যশোর সদরের চাঁচড়া ইউনিয়নের বেড়বাড়ি গ্রামের মিঠু শেখ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ইস্রাফিল বাদী হয়ে ৯ জনের নামে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ৫ নম্বর আসামি পাশের আরবপুর ইউনিয়নের খোলাডাঙ্গা গ্রামের খায়রুল ইসলামের ছেলে জনি। দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জনির প্রতিবেশী ট্রাকচালক সবুজ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে আসামি জনি হিসেবে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেই থেকে কারাগারে আছে সবুজ। নিরপরাধ ছেলের মুক্তির জন্য তিন মাস পুলিশের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো ফল না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন সবুজের বাবা। সবুজের পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে আদালতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য প্রমাণ জমা দেন তিনি। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে আগামী ২২ মে সবুজ ও মামলার বাদীসহ তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে সবুজকে আটক করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ভুল স্বীকার করে আদালতে প্রতিবেদনও দিয়েছে পুলিশ।
জনির বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক চোরাচালান সহ মোট ১২ টি মামলা রয়েছে। জনি সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদের আশ্রিত ক্যাডার ছিলো।