আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে ৩০ জন এবং লিনউডের মসজিদে ১০ জন নিহত হয়। বিবিসি বলছে, এ ঘটনায় আহতের সংখ্যা অন্তত ২০। হামলার পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করে সরাসরি সম্প্রচার করে ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন টেরান্ট।
এ ঘটনায় এক নারীসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ গঠন করার কথা জানান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আর্ডেন।
ক্রাইস্টচার্চ শহরের হ্যাগলে পার্ক এলাকায় আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে জড়ো হয়েছিলেন অন্তত ৩০০ মুসল্লি। নামাজ চলার সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে হামলা চালায় বন্দুকধারী। মসজিদের ভেতরে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে হামলাকারী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে প্রায় ২০ মিনিট ধরে মসজিদে তাণ্ডব চালায় বন্দুকধারী। পুরো ঘটনা নিজেই ভিডিও করে সে। হামলাকারী সেনা পোশাকে ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী।
আল নূর মসজিদের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জামা বলেন, পুরো ঘটনা আমার চোখের সামনে ঘটেছে। সেনাবাহিনীর পোশাকে ছিলো সে, মাথায় হেলমেট, চোখে চশমা। হাতে ছিল এম সিক্সটিন মডেলের বন্দুক যাতে কোনো শব্দ হয় না। কোমরে সিটবেল্ট দিয়ে গুলি বাধা ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছি তুমি কি করছো। আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে একে একে মানুষ মারতে শুরু করে সে। আমি কোনো মতে পালিয়ে এসেছি।
ঘটনার পরপরই সংবাদ সম্মেলন করেন নিউজিল্যান্ডের প্রধান জ্যাসিন্ডা আরডেন। এঘটনা নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক আখ্যা দেন তিনি। জড়িতদের কোন ছাড় না দেয়ার ঘোষণাও দেন।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডেন বলেন, এই ঘটনায় যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই অভিবাসী। নিরাপদ মনে করেই তারা নিউজিল্যান্ডে এসেছিলেন। এদেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। নিউজিল্যান্ডের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের কড়া জবাব দেয়া হবে।
আল নুর মসজিদে হামলার পর ক্রাইস্টচার্চ এলাকার বেশ কয়েকটি যানবাহন থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার করে তা নিস্ক্রিয় করে নিরাপত্তাবাহিনী। হামলা হয় পার্শ্ববর্তী লিনউড মসজিদেও। দুটি মসজিদে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেন, আমরা এখনো নিশ্চিত নই, এই হামলায় কতোজন জড়িত। এই সংখ্যা অনেক বেশি হবে এমন ধারণা আমাদের। পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন লক্ষ্য।
অতর্কিত এই হামলার ঘটনায়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নিউজিল্যান্ডে। জারি করা হয়েছে সতর্কতা। হামলার আগে ৭৪ পৃষ্ঠার এক ঘোষণায় অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ব্রেনটন টারান্ট নিজেকে কট্টর ডানপন্থী ও অভিবাসনবিদ্বেষী বলে দাবি করেন। ডুনেডিনের মসজিদেও হামলার পরিকল্পনা ছিল তার।
মসজিদে হামলার ঘটনার পর থেকেই হামলাকারী ব্রেনটন টেরান্টকে নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতুহল। ২৮ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয় নাগরিককে চরম ডানপন্থি সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী, স্কট মরিসন। তবে এর আগে তিনি নিরাপত্তা লংঘনের মতো কোন ঘটনা ঘটাননি বলে জানান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। হামলার আগে, নিজের বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের কথা নিজেই সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ করেন ব্রেনটন।
গাড়ি ভর্তি বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে, সেনা পোশাকে সেজে রীতিমতো গান গাইতে গাইতে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন ২৮ বছর বয়সী ব্রেনটন টেরান্ট। মাথায় বাঁধা মোবাইলে লাইভ স্ট্রিমিং করেন পুরো ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় তাকে বারবার থামতে বলা হলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ করেননি ব্রেনটন। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র হাতে পুরুষদের পাশাপাশি হামলা করেন নারী ও শিশুদের ওপরেও।
এখানেই শেষ নয়, হামলার আগে ব্রেন্টন নিজের অভিবাসনবিরোধী আর উগ্রডানপন্থী মতাদর্শের বিষয়ে ৭৪ পৃষ্ঠার একটি ম্যানিফেস্টোও প্রকাশ করেন অনলাইনে।
ব্রেন্টনকে উগ্রডানপন্থী সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে, সে অস্ট্রেলিয় নাগরিক বলে নিশ্চিত করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। নিউ সাউথ ওয়েলসে তার আত্মীয়স্বজন রয়েছে বলেও জানা গেছে।
স্কট মরিসন বলেন, ঘটনায় আটক একজন জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয় নাগরিক, একজন উগ্র ডানপন্থী, সন্ত্রাসী। তাই অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ সরাসরিভাবে তদন্তে যুক্ত থাকবে।
তবে এর আগে নিরাপত্তা লংঘনের কোন ঘটনা তিনি ঘটাননি বলে জানান, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। ব্রেন্টনের মতাদর্শ বিশ্ববাসী প্রত্যাখান করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হামলাকারীরা উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী, নিউজিল্যান্ডে এ মতাদর্শের কোনো স্থান নেই, সত্যি কথা বলতে কি পুরো বিশ্বেই এর কোন স্থান নেই।
এরিমধ্যে, বিদ্বেষমূলক পোস্টের কারণ ব্রেনটনের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্রেনটনের করা ভিডিওটি না প্রচার করতে জনগণকে অনুরোধ জানিয়েছে নিউজিল্যান্ড পুলিশ।